একজন অপদার্থ কাণ্ডজ্ঞানহীন পিতার গল্প বলি:

পিতাটা আমি নিজেই। আমার জমজ ছেলে দুটো মেডিক্যাল কোচিং করেছে, আগামীকাল পরীক্ষা। আমি বিশ্বাস করি লক্ষাধিক মেধাবী সন্তানের পিতার স্বপ্ন মেডিক্যাল। অথচ আসনসংখ্যা পাঁচ হাজার। তো আমি ভীত হই। কিন্তু ছেলের জন্য একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের আসনতো চাই ই চাই।

ছেলেরাও এমনটা অনুভব করছিল। দেখলাম, ওরা ডিপ্রেশনে ভুগছে। উদ্ভাসে টেস্টগুলোতে খাপছাড়া রেজাল্ট। টোটালি হতাশ ওরা।

বাবা হিসাবে আমি বোকার মতো ওদের পড়ালেখার চাপ কমিয়ে দিয়ে ঘুরতে বের হতাম। ফুচকা খাওয়া, কাচ্চি ভাইয়ের কাচ্চি খাওয়া, ব্র্যান্ডের জামা দেয়া, ব্যয়বহুল গাড়ি নিয়ে কুয়েটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়া।

ছেলেরা পরীক্ষার হলে ঢুকার ত্রিশ মিনিট আগে ওদেরকে দুটো চুটকি শোনালাম:

বাবারা, নারায়ণগঞ্জ থেকে খুলনা বহুদূর! এতো দূরে তোমাদেরকে পড়াবো না। নিয়ে আসলাম, জাস্ট কুয়েটটা ঘুরে দেখাতে। তাই পাশ ফেল নিয়ে ভাবিও না। জাস্ট ইনজয় করো।

চুটকি নাম্বার টু- ধরো যুদ্ধ ক্ষেত্রে তুমি এমন একটা জঙ্গল ঘরে আটকা পড়েছো, যার চতুর্পাশে শত্রু রাইফেল তাক করে আছে, দরজার সামনে বাঘ।

এখন তুমি কী করবে? ঘরে বসে বসে গুলি খেয়ে মরবা?

তারচেয়ে ভালো, সাহস করে ঘর থেকে বেরিয়ে যাও, ডু অর ডাই, যাই হোক, উত্তর দাগাতে থাকো।

পরীক্ষা শেষ করে ছেলেরা বের হলো। জানতে চাইলাম, সব দাগিয়েছো?

বললো, পাগল নাকি, ৮০% মার্ক কারেক্ট হবে অনুভব করে আর দাগাইনি। ইনশাআল্লাহ মেরিট লিস্টে থাকবো।

কথাগুলো শোনে আমি মনে মনে হাসলাম আর হাসলাম। কারণ আমি আহাম্মক অপদার্থ পিতা। পরীক্ষার ফলাফল হলো, দেখলাম - ওরা দুজনেই টিকে গেছে। আলহামদুলিল্লাহ।

বাবারা, তোমরা যারা চান্স পাওনি, টেক ইট ইজি। পৃথিবী অনেক সুন্দর, অনেক। মেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার তো সুন্দরবনের বিড়াল। কৃষকদের বাঘেরাও ভয় পায়। তাই জীবনকে ইনজয় করো। নো ডিপ্রেশন। বেঁচে থাকলে জীবনে মানুষ হওয়া যায়। তোমাদের নিকট হতে বাবা মা টাকা চায় না, তোমাদের কোমল মুখ দেখলেই তারা খুশি। সো ইনজয়, ঘুরো আর পরীক্ষা দিতে থাকো।

(সংগৃহীত)

Post a Comment

0 Comments