এই লেখাটি আজ ১১ই জানুয়ারি,২০২৫ আমার সদ্য ভূমিষ্ঠ কন্যা সন্তানকে উৎসর্গ করলাম।

এই লেখাটি আজ ১১ই জানুয়ারি,২০২৫ আমার সদ্য ভূমিষ্ঠ কন্যা সন্তানকে উৎসর্গ করলাম।

‘বাবা’                                                      

‘বাবা’ শুধুমাত্র একটি শব্দ না, এটি একটি ভালোবাসার নাম। বাবা হওয়ার কথাটা শুনে সবচেয়ে বেশি যিনি খুশি হন তিনি হলেন একজন পুরুষ। একজন বাবার সামনের দিনটা বিরাট চ্যালেঞ্জের। একজন বাবাকে সেই ছোট্ট মানুষটি পৃথিবীতে আসার আগে থেকেই নিজেকে প্রস্তুত করতে হয়। তার ছোট ছোট বায়নাগুলো পূরণের জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে। কেনোনা তার ওপর এমন একজনের দায়িত্ব পড়ছে, যার জন্য নিজেকে একদিন গর্বিত মানুষ বলে মনে হবে, বুক ফুলিয়ে বলতে পারবেন এইটা হচ্ছে আমার সন্তান। কথায় আছে, মা সন্তানকে গর্ভে ধারণ করলেও বাবা ধারণ করেন তার মস্তিষ্কে। কেননা একজন বাবাকে জন্মের আগে থেকেই ঠিক করে রাখতে হয় সন্তানের জন্য কোনটি করলে সবচেয়ে ভালো হবে,আর কোনটি করলে খারাপ। বাচ্চা জন্ম দেয়ার সময় হাসপাতালের বেডে সন্তান প্রসবের যন্ত্রণায় কাতরান আর একজন বাবাকে সন্তান লাভের আশায় নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে যন্ত্রণায় কাতরাতে দেখেও কিছু করার থাকেনা। স্ত্রীকে যখন ওটি রুমে নিয়ে যাওয়া হয় একজন সামি এইটাই আশা নয় থাকে যাতে তার দুইটি ভালোবাসার মানুষটিই সুস্থভাবে তার কাছে ফিরে আসে।জন্মের পর সন্তান যখন প্রথমবার কথা বলা শেখে তখন সে দুটি শব্দই বারবার বলতে শেখে, সেই দুটি শব্দ হলো ‘মা’ এবং ‘বাবা’। সন্তান যখন বাবা বলে প্রথম ডাক দেয় শুনেই প্রাণটা যেন জুড়িয়ে যায়। ছোট্ট শিশুটি আসতে আসতে বড় হয়, হামাগুড়ি দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কখন যে আঙ্গুল ধরে ধরে হাঁটা শেখা শুরু হয়ে যায় বোঝাই যায়না। সন্তান যখন বাবার আঙুলটি শক্ত করে চেপে ধরে হাঁটা শুরু করে, তখন বাবার নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী ব্যাক্তি বলে মনে হয়। সন্তান ধীরে ধীরে বড় হয়,মায়ের অ-আ শিখতে শিখতেই যেনো খুব দ্রুত পদার্পণ ঘটে স্কুলের গণ্ডিতে। এইভাবেই শুরু হয় দুনিয়াবী শিক্ষার কার্যক্রম। স্কুল থেকে কলেজে তারপরে কলেজ থেকে ইউনিভার্সিটিতে বাবার সেই ছোট্ট সন্তান পা রাখে। সন্তান ছোট থেকেই কোনো পরীক্ষার রেজাল্টে সামান্য নম্বর কম পেলে একজন বাবা শাসন করেন, আরো ভালো রেজাল্ট কীভাবে করতে হবে সেই পরামর্শ দেন, আবার পরীক্ষায় রেজাল্ট ভালো করলে আদর করে বুকে জড়িয়ে নেন। একজন বাবা সর্বদা চান উনার সন্তান জীবনে অনেক বড় মানুষ হোক, তার সন্তান যেন নিজের পরিচয়ে বড় হয়, বাবার পরিচয়ে না। মানুষ যেনো ছেলেকে দেখিয়ে এইটা না বলুক যে এইটা অমুকের সন্তান, বরং উনাকে দেখিয়ে এইটা বলুক যে এইটা অমুকের বাবা। তিনি বর্তমানে যেই পজিশনে আছেন উনার সন্তান যেনো উনার থেকেও এক ধাপ উপরের কোনো ভালো পজিশনে থাকে। প্রতিটা বছর ঘুরে ঈদ আসে, কিন্তু বাবার গায়ে নতুন জামা আসে না। কথায় আছে, স্ত্রীর পুরনো শাড়ি মেয়েরা পড়তে পারলেও বাবার পুরনো শার্ট ছেলেরা পড়তে পারেনা, সন্তানের আবদার পূরণেই একজন বাবা খুশি। পরণের স্যান্ডেলটা ছিঁড়ে গেলেও তাতে সেলাই করে আরো একটা বছর চালাতে একমাত্র বাবারাই পারেন। সন্তান বড় হওয়ার সাথে সাথে নানা আবদার এর লিস্টটাও বড় হয়। ছোট্ট শিশুটি বড় হওয়ার সাথে সাথে একজন বাবাকে পরিশ্রমের মাত্রাটাও ধীরে ধীরে বাড়িয়ে তুলতে হয়, হাঁফ ছাড়ারও যেনো আর সময় নেই। কারণ, বাবুটার জন্য অনেককিছু কেনাকাটা করা লাগবে, সে একটু বড় হলে ছোটখাটো আবদারগুলো পূরণ করা লাগবে। প্রাথমিক থেকে হাই স্কুলে উঠলেই ছেলের আবদার দামি স্মার্টফোন চাই,আগের সেই বাটন ফোনে আর চলা যাচ্ছেনা, বাকি বন্ধুদের অনেক দামি দামি স্মার্টফোন। বাবার পক্ষে ছেলের আবদার সঙ্গে সঙ্গে পূরণ করাটা অসম্ভব, যদি তিনি মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্ত পরিবারের হোন, একটা মধ্যম মানের স্মার্টফোন কিনতে হলেও উনাকে ছয় মাসের বেশি সময় লাগবে টাকা জমাতে। কিন্তু না ছেলের ধৈর্যের অনেক কমতি,তার আবদার তাকে এ সপ্তাহেই নতুন ফোন কিনে দেওয়া লাগবে। ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে কারো কাছে টাকা ধার করে তিনি সেই শখ পূরণ করেন, যদিও সেই ধারের টাকা পরিশোধ করতে উনাকে অনেক কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়েছে, তবুও তাতে কি আমার বাচ্চাটা তো এখন বেজায় খুশি! ঈদে মেয়ের নতুন জামা চাই, দাম ২ হাজার,আরও চাই দামি কসমেটিক্স। একটি ভালো জুতো নিজের জন্য পছন্দ করেছিলেন, কেননা জোড়া জুতাগুলো যে বেশ পুরনো হয়ে গেছে,অনেকদিন ধরে কিনবো কিনবো করে কেনা হয়না। তবুও মেয়ের খুশির জন্য হাসিমুখে নিজের ইচ্ছেটা দমাতে একমাত্র বাবারাই পারেন। একজন বাবার কাছে সবচেয়ে বেশি আদরের মেয়ে হয়। সেই আদরের মেয়েটিও দেখতে দেখতে ছোট থেকে হঠাৎ অনেক বড় হয়ে যায়, পড়াশোনা শেষ করে হয়ে যায় বিয়ের উপযুক্ত। ভালো পাত্রের সন্ধান করে সেই কলিজার টুকরা মেয়েটিকেও একটা সময় অপরিচিত একজন মানুষের হাতে তুলে দিতে হয়। যেই মেয়েকে ছাড়া বাবা খেতে বসতেন না, এখন তাকে ছাড়াই খেতে বসে লাগে, এখন বাইরে থেকে বাসায় আসলেই যেন শূন্য শূন্য লাগে। ছেলেটা কলেজে উঠলে তার চাই ভালো দামি বাইক অথচ বাবা এখনো বাসা থেকে অফিস করেন অর্ধেকটা পথ হেঁটে আর বাকি অর্ধেকটা লোকাল বাসের ধাক্কা খেতে খেতে। কিন্তু ছেলেকে কলেজে পাঠান রিকশা ভাড়া দিয়ে যাতে তার যাতায়াতে কোনো ধরনের সমস্যা না হয়। বাবার সামান্য বেতনে বাবার পক্ষে ছেলের এই আবদার মেটানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়, তখনই বাবাকে শুনতে হয় ছেলের রোখা কথা, তোমার কাছে টাকা থাকলো কবে? আজ পর্যন্ত আমার একটাও শখ পূরণ করছো? আমার বন্ধুদের কতো দামি বাইক আছে,দামি স্মার্টফোন আছে, কিন্তু আমাকে রোজ রিকশায় আর নাহয় সাইকেল নিয়ে কলেজে যেতে হয়। তুমি কিনে দিবা নাকি দিবানা সেই কথা আগে বলো। বাবার পক্ষেও হার মেনে নিয়ে ছেলের কথা শোনা ছাড়া আর যে কিছুই করার নেই। একজন বাবা সন্তানের স্বপ্নগুলো পূরণের চেষ্টা করে যান আমৃত্যু, কিন্তু কয়জন সন্তান বাবার জন্য সর্বস্ব বিলিয়ে দেয়? বাবা যাকে বলা হয় সংসারের মূল চালিকাশক্তি, বাবা যাকে নিয়ে হাজারো পাতার উপন্যাস অনায়াসে লেখা যাবে, কিন্তু তা আর শেষ করা হয়ে উঠবে না। ‘বাবা’ যিনি হাজারো চিন্তা মাথায় নিয়েও অনায়াসে হাসতে পারেন। ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল ‘বাবা’।


Post a Comment

0 Comments