বাবা নামক বটগাছের ছায়াটা সরে যাওয়ার পর সূর্যের তপ্ত রোদ কতোটা হিংস্র হয়, তা অনুভব করতে হয়েছিলো ফরহাদকে। দিনের পর দিন, দুপুর আর রাতের খাওয়ার হিসেবে ডাল-ভর্তা ছাড়া আর কিছুই জুটেনি।
সকালের নাস্তা কিংবা শহুরে ভাষায় ব্রেকফাস্ট ছিলো ফরহাদদের সংসারের জন্যে বিশাল বিলাসিতা। এত বিলাসি জীবন তাদের মানাতো না। মরিচ দিয়ে পান্তাভাত খেয়ে ফরহাদ স্কুলে গিয়েছে দিনের পর দিন।
অর্থ সংকট, অভাব-অনটন একটা সময় ফরহাদকে ভাবিয়েছে কিডনি বিক্রি করে দেওয়ার কথা। হতাশার অতলে ডুবতে ডুবতে এক সময় আত্মহুতি দেওয়ার চেষ্টাও করে সে।
ফরহাদ সংসারের বড়ছেলে। জগতের নিয়ম এই যে, বড়ছেলেদের দায়িত্ব বেশি। আর যে বড়ছেলের বাবা থাকে না? তাকে হয়ে যেতে হয় সংসারের কর্তা।
নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই টিউশানি শুরু করে ফরহাদ। পড়ালেখার পাশাপাশি জব করার ইচ্ছা থাকলেও স্কিলের অভাব সে ইচ্ছে অপূর্ণ রেখে দেয়। ইচ্ছা? নাকি প্রয়োজনীয়তা? কেউ কাজে নিলেও বিদায় করে দিতো তাদের এক্সপেক্টেশন মিট না হওয়ার কারণে।
হাতে থাকা মাত্র তিন হাজার টাকার ফোন নিয়ে ভালো একটা ক্যারিয়ারের কিংবা ভালো একটা এমাউন্ট ইনকামের চেষ্টা চালাতে শুরু করলো ফরহাদ। ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে জানার চেষ্টা করলো। শুরু করলো আর্টিকেল রাইটিংও। কিন্তু, হলো না।
ঝংকার মাহবুবের ‘হাবলুদের জন্য প্রোগ্রামিং’ বইটা পড়ে ফরহাদ। বইটা পড়ে প্রোগ্রামিং-এর প্রতি কিছুটা ইন্টারেস্ট কাজ করে তার। শুরু করে ইউটিউব থেকে পাইথন শেখা। এরপর, শুরু করে ওয়েব এন্ড্রয়েট ডেভেলপমেন্ট শেখা। অথচ, তার তখনো পিসিই নেই। কিন্তু প্রজেক্ট করতে তো পিসি দরকার! টিউশানের টাকা জমিয়ে আর পাশাপাশি কিছু এক্সট্রা কাজ করে পনেরো হাজার টাকা ম্যানেজ করে একটা পিসি বিল্ড করে সে।
কয়েকটা এন্ড্রয়েড এপও ডেভেলপ করে এর মধ্যে। তা দিয়ে কিছু আয়ও করতে সফল হয় ফরহাদ। কিন্তু ডিসিশন নেয়, টেকনোলজি সুইচ করবে। মার্নস্ট্যাকের হাইপ দেখে এদিকে আসে সে।
আগে থেকে ঝংকার মাহবুবের ফ্যান হওয়ার কারণে আস্থার সাথে প্রোগ্রামিং হিরো’র ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কোর্সে ভর্তি হয়ে যায় সে।
কোর্স শুরু করার আগেই কিছুটা এইচটিএমএল, সিএসএস এবং জাভাস্ক্রিপ্ট এক্সপ্লোর করে সে। তাই কোর্সের জাভাস্ক্রিপ্ট পর্যন্ত মাইলস্টোনগুলো থাকে অনেকটা প্যারামুক্ত জীবন দিয়েছে।
কিন্তু রিয়েক্ট তাকে একটা ঝাঁকি দেয়। অন্যদিকে যে টেকনোলজি তাকে ঝাঁকি দিবে কিংবা একটু চ্যালেঞ্জিং, সে পণ করেছে তাতে আরো বেশি সময় দিবে। বেশি বেশি প্র্যাক্টিস তাকে সফলতা এনে দেয়। এবং কোর্সের সবচেয়ে হাইয়েস্ট রিওয়ার্ড ব্ল্যাকবেল্ট অর্জন করি।
ফরহাদের মতে, প্রতিদিনের মডিউল এবং টাস্ক প্রতিদিন শেষ করা এবং মডিউল-টাস্ক শেষ না করা অব্দি বাসা থেকে বের না হওয়ার চ্যালেঞ্জ নেওয়া তার এই কোর্স শেষ করতে পারার মূল মন্ত্র ছিলো।
কোর্স শেষে অবার জব খোঁজার পালা। কিন্তু, জব পাওয়ার জন্য ধৈর্য লাগে। রিজেকশনে হতাশ হওয়ার চাইতে বেশি নিজেকে গড়াতে মনোযোগ দেয় ফরহার। ০৬ টা ইন্টারভিউতে রিজেক্ট হয় সে এবং ওই একই মাসে ০৬ টা কোম্পানি তাকে জব অফার দেয়। তার মধ্যে ছিল দুবাই, জার্মানি, আমেরিকার ২টা। ইন্ডিয়ার একটাতে জয়েন করলেও সেটা থেকে রিজাইন করে বেটার অপরচুনিটি পেয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার একটা কোম্পানিতে জয়েন করে সে।
মাস তিনেক পর ওই তার এক কলিগ তাকে Ctech Inc নামের একটা কোম্পানিতে রেফার করে। আজ প্রায়ই ১ বছর ধরে সেখানেই ফুল টাইম সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আছে সে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তার কাজের প্রতি ডেডিকেশন দেখে তাকে iPhone 12 গিফট করে কোম্পানি।
সফলতার গল্প তৈরি হতে নিজেকে লড়াই করতে হয়। ভেঙ্গে গেলে নিজেকে আবারও গড়ে নিতে হয়। যেমনটা করেছে আমাদের ফরহাদ।
Name : Md Rayhan Uddin Farhad
Designation: Software Engineer
Company Name: Ctech Inc.
Company Location : Seattle, Washington, USA
Batch: 7
Story Credit: Humans of Programming Hero
0 Comments