তৃতীয় সন্তান সিজারে হওয়ার পর আকস্মিকভাবে স্ত্রীর ওজন বেড়ে যায়

 তৃতীয় সন্তান সিজারে হওয়ার পর আকস্মিকভাবে স্ত্রীর ওজন বেড়ে যায়। অত্যাধিক চর্বিযুক্ত শরীরের মানুষটাকে এখন আর স্বামীর ভালো লাগে না। প্রতিনিয়ত স্ত্রীকে বোলিং করেন। সারাক্ষণ ওজন কমানোর জন্য রাগারাগি করেন। 

স্ত্রীও আগের শরীর পেতে খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে ডায়েট করছেন। কিন্তু, তারপরেও কিছু হচ্ছে না। অতঃপর স্ত্রীর নামে বদনাম রটে গেলো। স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীর বাপেরবাড়ির প্রত্যেকের নিকট নালিশ যাওয়া শুরু হলো। এখন যে-ই দেখে, সে-ই খাবার কমানোর উপদেশ দেয়। স্বামীর মাধ্যমে সবাই শুনলো, তার স্ত্রী এক খাদক মহিলা! সারাদিন-রাত শুধু একটার পর একটা খেতেই থাকে। বাচ্চাদের রেখে নিজেই রাক্ষসের মতো খায়। 

এই স্বামী তার বন্ধু-মহলেও স্ত্রীকে নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েন নি।

অথচ, শুরুতে স্ত্রীর মেদহীন শরীর নিয়েও তার অভিযোগ ছিল। যখন স্ত্রী ছিলেন ছিমছাম গড়নের, তখন স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির সবাই বলত, “ বাপেরবাড়ি থেকে মনে হয় কিছু খাওয়ায় নি। বউ মানুষ আবার এতো হালকা-পাতলা হয় না-কি? কাজ করবে কীভাবে? ”

আর এখন মেদযুক্ত শরীর তাদের সুনাম বাড়িয়ে দিয়েছে— “ স্বামীর বাড়িতে প্রচুর খাবার, স্ত্রী মনমতো খায়। ”

নিত্যদিন নিজের স্বামীর কাছে শরীর নিয়ে বোলিং- এর স্বীকার হয়ে স্ত্রী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। তিনি তার অবস্থা বুঝাতে পারছেন না। বারবার ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা বললেও স্বামী তাতে নারাজ।

স্বামীর ভাষ্যমতে, “ তুমি পরিশ্রম করছো না কেন? সারাক্ষণ শুয়ে থাকলে, আরাম করে খেতে থাকলে শরীর তো এমন-ই হবে। কাজ করো, কম খাও। ”

স্ত্রী দীর্ঘশ্বাস ফেলেন! একহাতে তিনটি বাচ্চার দেখাশোনা করার পাশাপাশি সংসার সামলানো কম ব্যাপার না! ঘরের কাজে সাহায্য করার মতোও কেউ নেই। তারপরেও সবাই ভাবে তিনি কাম চোর। মেহমান আসে, খাবার খায়। গৃহিণীর শরীর দেখে পরিশ্রমের জ্ঞান দেয়। বোকা মানুষগুলো বুঝতে চায় না, তাদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেছে কে!

এমনি এমনি তো এতো খাবার তৈরী হয়ে যায় নি!

কখনো শরীর খারাপ করলে কেউ বিশ্বাস করতে চায় না। “ মাথা ঘুরছে, শরীর দূর্বল লাগছে ” এগুলো তো বলাই যাবে না। যেন চর্বিযুক্ত শরীরে কোনো রোগ হয় না। তারা শরীরে পৃথিবীর সমস্ত শক্তি নিয়ে বসবাস করে!

হঠাৎ একদিন এই গৃহিণীর প্রচণ্ড জ্বর বাঁধে। স্বামী বরাবরের মতো তা আমলে নেন নি। এমনকি স্ত্রীর পরিবারেও জানান নি। সেই সময়টাতে তিনি সন্তানদেরকে নিয়ে বাহিরে খেয়ে নিতেন। খাবারবিহীন তিনদিন একটানা বিছানায় পড়ে থাকার পর স্ত্রীকে হসপিটালে নিয়ে যান। ধরা পড়তে থাকে একের পর এক রোগ। সেসবের জন্য আবার  স্বামী স্ত্রীর উপর রেগে যান— “ কতো করে বললাম ওজন কমাও, কথা তো শোনো নি! এখন বুঝো মজা। আমি চিকিৎসা করাতে পারব না। ”

কাতর স্ত্রীর চোখ থেকে শেষবারের মতো কয়েক ফোঁটা পানি ঝরলো। হয়তো ভেবেছিলেন, তার মুমূর্ষ অবস্থা দেখে স্বামীর একটু হলেও মায়া হবে, সংসারে স্ত্রীর অবদানটুকু বুঝবে। কিন্তু, এ যেন ভুলে ভরা এক জগত!

স্ত্রী সেদিনই মারা গেলেন। ডাক্তার জানান, ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতিত ওজন কমানো-ই ছিল নানাবিধ রোগের বাসা বাঁধার কারণ। স্বামী নিশ্চয়ই এখন অনুতপ্ত হবে? বিবেকের দংশনে পুড়বে? স্ত্রীর গুরুত্ব বুঝবে? 

না! স্বামী কিছুই বুঝে নি। দয়াহীন প্রাণীরা কখনো বিবেকের দংশনে পুড়ে না। নির্বোধ স্বামী হার মানতে রাজি নয়। পুনরায় রটিয়ে দিলো, অতিরিক্ত ওজন-ই মেরে ফেলেছে। 

স্বামী পুনরায় বিয়ে করলেন। সন্তানদের ঠাঁই হলো সৎ মায়ের দুয়ারে। যত ভালো মনের মানুষ হোক, কেউ কখনো অন্যের সন্তানকে নিজের সন্তানের মতো বুকে টেনে নিবে না, এটাই বাস্তব। বাচ্চাদের মানসিক অবস্থা এখন কেমন, তা তারাই ভালো জানে। ভয়ে কুঁকড়ে যাওয়া মুখে কখনোই তারা সত্য উদঘাটন করবে না। 

এই একই চিত্র হাজারটা সংসারে আজ দৃশ্যমান। বেশীরভাগ নারীরা ভেবে থাকেন, তিনি মারা গেলে স্বামী তার মর্ম বুঝবে। উপলব্ধি করবে এবং আক্ষেপ করবে। কিন্তু, এটা কতো বড় একটি ভুল ভাবনা, তারা জানেন না। 

আমি সেসব নারীদের জন্য বলব, নিজের অবস্থান নিজেই ধরে রাখুন। আবেগী হয়ে বাস্তবতা থেকে দূরে সরে পড়বেন না। অদৃশ্য আবেগের জন্য মানুষের মনে করুণা হয় না। আপনি আগে বাঁচুন আপনার নিজের জন্য। নিজেকে নিয়ে ভাবতে পারলে আপনার সন্তানদের জীবনও অনেক রঙিন হবে। এই লড়াইটা একান্ত আপনার। এখানে কেউ আপনাকে সাহায্য করতে আসবে না। 

মনে ক্ষোভ রেখে সংসার হয়, কিন্তু ভালোবাসাটা আর হয়ে ওঠে না। হৃদয়ে স্থান না থাকলে, নিঁখুত কাজ করলেও খুশী হবে না। আপনি যতোই নিজেকে ভেঙ্গেচুরে ফেলুন, তবুও আপনার কাজের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে না। 

যে মর্ম বুঝার, সে বেঁচে থাকতেই তা বুঝে নিবে। বুঝতে না চাইলে, আপনি মরে গেলেও সে আক্ষেপ করবে না। 

#বিবর্ণ_জীবন

#Samiha_Jannat

Post a Comment

0 Comments