‘একতরফা প্রেম’

  তারিখঃ ০৪/০১/২৫

‘একতরফা প্রেম’ কি অদ্ভুত শোনায় তাই না! প্রেম তো প্রেমই তাতে আবার একতরফা-দুতরফা কই থেকে আসলো? আসলে এক তরফা প্রেম হচ্ছে সেটাই যে, আপনি কোনো একজনকে পছন্দ করেন বা ভালোবাসেন কিন্তু সেই মানুষটি অন্য কাউকে ভালোবাসে অর্থাৎ, সে আপনাকে ভালোবাসে না। একতরফা প্রেমকে আমরা প্রেম-ভালোবাসার কাতারে ফেললেও তা কখনোই এক কাতারে পড়ে না। এই একতরফা প্রেম নিয়ে ঘটনা বেশিরভাগই ঘটে থাকে ছেলেদের দ্বারা, আমি বলছি না যে মেয়েদের দ্বারা এই কাজটা হয় না, তবে তা নিতান্তই কম। যদি কোন মেয়ে একটি ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলে বা একটু ফ্রি ভাবে তার সাথে চলার চেষ্টা করে, ছেলেটা তখনই ভাবে মেয়েটা তাকে পছন্দ করে। কিন্তু আসলে মেয়েটার মনে ছেলেটার জন্য এ ধরনের কোনো ফিলিংসই নেই, তা যেন ছেলেটা কখনো ভাবেই নি। আবার মেয়েটা যদি ছেলেটাকে কোনো প্রয়োজনে ফোন নাম্বার দেয় তাতেও প্রবলেম, নিশ্চয়ই সে আমাকে পছন্দ করে তাই নাম্বার দিলো, নয়তো ফোন নম্বর দিবে কেনো? ভালোবাসায় যে দুজনের মনে একই ধরনের অনুভূতি কাজ করা প্রয়োজন সেটি যেনো ছেলেটি বুঝতেই চায় না। একজন মানুষ যদি নিজের কমনসেন্স দিয়ে ব্যাপারগুলো চিন্তা করে, যে মেয়েটা কোনোদিন আমাকে পছন্দ করে তা বলেনি, রাস্তায় হাত ধরে হাঁটেনি, প্রেমিকার মত ফোনে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটায়নি, মান-অভিমানের কোন ঘটনাই ঘটেনি যা প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যকার বৈশিষ্ট্য বলা যায় আর কি! তাহলে কিভাবে সেই সম্পর্ককে ভালোবাসা বলে মেনে নিচ্ছি? তবে কি আমরা ধরে নিবো যে ছেলেটার কমনসেন্সটুকু কি ঘাস খেতে গেছে? মেয়েটা যখন এ ব্যাপারে জানতে পেরে তাকে জিজ্ঞেস করে যে, আমি কি তোমাকে ভালোবাসি এই কথাটা একটাবারও বলেছি? তোমাকে তো সব সময় আমি একটা ভালো বন্ধুর চোখেই দেখেছি। এসব শুনে শুরু হয় ছেলেটার ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল যার আওতা নিজের হাত কাটাকাটি থেকে শুরু করে, ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করা অব্দিও গড়ায়।

আসলে আমরা মানুষ জাতিটা মাঝে-মধ্যে খুবই নির্বোধ এর মতো কাজ করে ফেলি। প্রকৃত প্রেম আর এক-তরফার মধ্যকার পার্থক্যটা বুঝিনা। তোমাকে আমি শুধুই ফ্রেন্ড এর চোখে দেখি বলার সাথে সাথেই শুরু হয় আরেক নাটক, তুমি তাহলে আমার সাথে এতো ফ্রি হয়ে কেনো কথা বললে? কেনো নিজের ফোন নাম্বার আমাকে দিয়েছো? মাঝে-মধ্যে আমার সাথে আড্ডা কেনো দিয়েছো? আরো অনেক কাহিনি আছে যা বলে শেষ করা যাবেনা। সবশেষে, এই সম্পর্কে কিছু না হলে বন্ধু মহলে ছড়ানো হয় তাকে আমি খুবই ভালোবাসতাম, কিন্তু সে আমাকে প্রেমে ধোঁকা দিয়েছে। আমি এতোটুকু বুঝলাম না, এখানে ভালোবাসাই তো নেই, তাহলে ধোঁকা কই থেকে আসলো? 

এদের মধ্যে কিছু মানুষ কাওকে ভালো লাগলে নিজ থেকে গিয়ে কথা বলবে, না বলতে পারলে বন্ধুদের দিয়ে ভালোবাসার বলাবে অথবা খোঁজ লাগাবে কারো সাথে বর্তমানে সম্পর্কে আছে কিনা! সম্পর্কে থাকলে পাগলের মতো সেই সম্পর্ক ভাঙানোর চেষ্টা করবে। আর সম্পর্কে না থাকলে তাকে এক ঝলক দেখতে, তার যাওয়া আসার রাস্তায় আগে আগে গিয়ে দাঁড়াবে, তার বন্ধু-বান্ধবী কারা সেটির খোঁজ করবে, তাদেরকে বন্ধু বানিয়ে তাদের সাহায্য নিয়ে তার সাথে সম্পর্কে জড়ানোর ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালাবে। পছন্দের মানুষটি মেয়ে হলে ছেলেটা তার পাড়া আর বাসার নিচে ঘুরাঘুরি করবে, পাড়ার দাদারা ব্যাপারখানা বুঝলে তাদের হাতে ইচ্ছেমতো ক্যালানী খাবে, নয়তো সে যাত্রায় পালিয়ে বেঁচে যাবে। বন্ধুদের দিয়ে ছেলেটা তার ফোন নাম্বার কষ্টে জোগাড় করবে, কিন্তু ফোনে কল দেওয়াটা আর হয়ে উঠবে না। ফেসবুক, ইন্সটা আইডি খুঁজে বের করে সেখানে মেসেজ এর বন্যা করে ফেলবে, হয়তো কোনোদিন রিপ্লাই আসবে না ওপার থেকে, আর রিপ্লাই পেলেও দু-চারটে কথার পরে কনভার্সেশনের সমাপ্তি ঘটবে। আর প্রেমটা যদি পরিচিতজন অথবা বান্ধবী হয় তবে তার নাম্বারে মেসেজ আর ফোন দিয়ে হাজারবার ভালোবাসি বোঝানোর অযথা প্যাচাল পারবে। ফেসবুক টুইটারে তার ছবিগুলো প্রতিদিন কয়েকবার করে দেখাটা অভ্যাসে পরিণত করবে। স্কুল-কলেজের প্রেম হলে তাকে দেখতে তার প্রাইভেটের খোঁজ লাগাবেন, সেখানে গিয়ে প্রয়োজনে ভর্তি হবে একই ব্যাচের হলে। কথা বলার সাহস হলে কথা বলবে, নয়তো এক ঝলক দেখার মাঝেই সেই চ্যাপ্টার বন্ধ করবে। ছেলেটা অন্য কাওকে রাস্তাঘাটে মেয়েটাকে ডিস্টার্ব করতে দেখলে বন্ধুদের নিয়ে ইচ্ছামত ক্যালানি দিয়ে তার কাছে হিরো সাজার চেষ্টা করবে। আর মার খাওয়া ছেলেটা ডেয়ারিং হলে ছেলেটা ইটের বদলে পাটকেলটাও খাবে। মেয়েটার কাছে নিজেকে মার খেয়ে সহানুভুতির স ও পাবেনা। দুইদিন পরে মেয়েটাকে অন্য এক ছেলের হাত ধরে রাস্তায় হাঁটতে দেখে কেঁদে কেঁদে বিছানার বালিশ ভিজিয়ে সারাজীবন ঐ মেয়েটার স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকবে, আর নাহয় অন্য আরেকটি প্রেমের পিছে দৌড়াবে, আসলে এই এক তরফা প্রেমের শুরু আছে শেষ নেই তাই অবশেষে একটাই উপদেশ থাকলো, ভালোভাবে পড়াশোনা শেষ করুন, ভালো একটা চাকরি/ব্যবসা করুন, বাবা মায়ের পছন্দে বিয়ে করুন আর সুখি থাকুন।



Post a Comment

0 Comments