অনেকেই এই গল্পটা শোনার জন্য আমাকে ইনবক্স করছিলেন।
লেবার রুমের দুই নাম্বার সিটে আমি এডমিট হবার পর যতো সময় যাচ্ছিলো আশেপাশের রোগীদের,তাদের স্বজনদের কথায় অনেকটাই তাদের হিস্ট্রি ক্লিয়ার ছিলো,
যেহেতু লেবার রুম, সবাই ডেলিভারির ই অপেক্ষায়,
আমি প্রায় স্বাভাবিক ই ছিলাম, পর্দা দেয়া ছিলো, আমি শুয়ে ফেইসবুকিং করছিলাম,
এক নাম্বার সিটের মেয়েটার বয়স ২০/২২ হবে হয়তো, খুব প্রফুল্ল ছিলো, সবাই দেখা করতে আসছে একের পর এক,
মেয়েটা সবার সাথে হাসি ঠাট্টা করছিলো,সবাই বলছিলোঃ আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যেই,
মেয়েটা হাসতে হাসতে বলছিলোঃ হ্যাঁ আমিও আমার আম্মা রে বলতেছি আম্মা যা হইছে ভালোই হইছে।
আমি আসলে কনফিউজড হয়ে যাচ্ছিলাম যে ব্যাপার কি!
পরে আন্দাজ করলাম হয়তো মেয়ে বাবু হবে তাই স্বান্তনা দিচ্ছে সবাই।
তারপরও বুঝে উঠতে পারছিলাম না যে কি হচ্ছে!!
তারপর আরো সময় যাচ্ছে, মেয়েটার আরো স্বজনেরা দেখা করছে,
এর মধ্যে ওর কাজিন এসছে দুজন মেয়ে, ও তাদের দেখে খুশিতে মনে হয় নেচে উঠলো,
হাসতে হাসতে বললোঃ তোরা আইছো! আমার খবর পাইয়া! নাইলে আইতানা! বলেই অট্টহাসি,
মেয়েটা কাজিন কে বললো আমার শোয়া অবস্থায় কয়ডা বালো ছবি নে তো, বেড টা সুন্দর,
তারপর তারা কিছু সেলফিও তুললো,
এবার আমি আমার বেডের পর্দা সরিয়ে দিলাম,
আমি কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই মেয়েটা আর তার দুই সম বয়সী কাজিন আমারে সব কিছু জিজ্ঞেস করছিলো,
তারপর আমি জিজ্ঞেস করলাম তোমার কি অবস্থা?
মেয়েটা আমাকে অবাক করে দিয়ে বললো ৬ মাসের বাচ্চা নষ্ট অইয়া গেছে,ম, রা ডেলিভারি হইছে একটু আগেই, ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা করতেছে,আইলেই যামু গা 🙂
আমি তো পুরাই মানে ভাষা হারিয়ে ফেলছি ওর কথা শুনে,
জিজ্ঞেস করলাম বাচ্চাটা দেখছো?
বলেঃ আরে হ, ওই যে বেডের নিচেই তো ট্রে তে 🙂🙂
কি স্বাভাবিক ভাবে বললো 🙂
আমি বললাম দেখাবা একটু?
মেয়েটা বললো ও মামী এই আফুরে নিচেত্তে লা,, শ টা দেহান গো, বলেই কাজিন দের সাথে বিজি হয়ে গেলো।
ওর মামী বেডের নিচে খেয়াল করেন স্টিলের ট্রে আছে, ওটা বের করে ঢাকনা সরাতেই দেখি ছোট একটা মেয়ে বাচ্চা 😭😭
সব আছে শুধু প্রাণ টা নাই রে 😭
আমার নিজের ই কান্না চলে এলো, উনি আবার ট্রে টা বেডের নিচে রেখে দিলেন,
তারপর শুরু হলো ওদের বাসায় যাওয়ার জন্যে অস্থিরতা, ডাক্তার কহন আইবো,বাইত যামু হ্যান ত্যান!
তারপর এক সময় নার্স আয়ারা এসে বললো বাবুর ব ডি কি করবেন,
রোগীর মা বললো আপনেরা ওয়ার্ড বয়েগো ফালায় দিতে কন টেকা যা লাগে দিয়া দিমু নে 🙂
এবার আমি বললাম আন্টি এইভাবে বলতে পারলেন! বাচ্চাটা জা নাজা না পাক, নিজেদের কাছে তো মাটি দিবেন 🙂
ওদিকে তারা নাছোড়বান্দা, বডি নিবে না,
তারপর নার্সেরা ক্ষেপে গেলো ওদের উপর,তারপর রোগীর স্বামী এই কার্টুন টা নিয়ে এলো,
এটা দেখে নার্স আরো ক্ষেপে গেলো, আমি সহ সবাই রাগারাগি শুরু করলাম এবার, নিজের সন্তান,এভাবে ফেলে দিতে চাইছেন,আবার কাগজের প্যাকেট, প্যাকেট ভিজে তো ছিড়ে যাবে,
তারপর মেয়েটা বললোঃ মা আমার ব্লাড গেছে যে পেটিকোটে,ওইডা দিয়া প্যাচাইয়া পলিথিনে বাইন্ধা দাও,ভিজবো না,তারপর কার্টুনে ভইরা ওয়ার্ড বয়েগো দেও গা 🙂🙂
ততোক্ষণে নার্স আয়ারা খুব রেগে ওখান থেকে চলেই গেলো,
আমি তখন আমার বেডের পর্দা টেনে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলাম, আর ভাবলাম হা য়রে মাতৃত্ব!! এ কেমন মায়ের কাছাকাছি এলাম আমি!
তুই খুব লাকী রে মামনি, এই পাষন্ড মহিলার সন্তান হয়ে জন্ম নিস নাই 😔😔😔
তারপর খুব দ্রুত প্যাকেট করা শেষে নার্সের হাতে কার্টুন দিয়ে ওরা উদ্ধার হলো 🙂🙂
যতোবার ১৮ জানুয়ারি আসে, ওর পি শাচ মহিলার কথাও আমার মনে হয়।
সংগৃহীত
0 Comments