ইসলাম নারীদের কতটা সম্মান, ইজ্জত, সহজ ও সুন্দর জীবন দিয়েছে তা বুঝতে সক্ষম না এই পাশ্চাত্যের পূজারী মেয়েরা

 দৃশ্য:১ 

একদিন একটা পিৎজা কিনতে একটি রোড সাইড দোকানে গিয়েছিলা। দাম খুব একটা বেশি না। ২০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। 

কর্মচারী ছিল দু'জন পুরুষ ও দু'জন নারী। ছেলে গুলো পিৎজা বানাচ্ছে আর মেয়ে গুলো সেগুলো সার্ভ করছে মানুষের কাছে। জিজ্ঞেস করলো খুবই কোমল সুরে, 'ভাইয়া এই পিৎজা টা নিতে পারেন, এটি আমাদের এখানকার বেস্ট পিৎজা।'

'কত ইঞ্চির টা দিবো?'

'ভাইয়া আমাদের এখানে পে ফার্স্ট সার্ভিস, কাইন্ডলি প্রথমেই পে করে দিন'

এ জাতীয় কথোপকথন হচ্ছিল তার সাথে। মেয়ের আউটফিট যদি বলি তাহলে বয়স এরাউন্ড ২০-২২, হিজাব পরা, মুখে মাস্ক। বুঝাই যাচ্ছিল পার্ট টাইম জব করছে এখানে। 

তো তার যে বস, মানে ছেলেটা তাকে একেকটা কাজের কথা বলছে আর ঝাড়ি মারছে। বস বলছে একরকম, সে কাজ করছে আরেকরকম। ভালো পরিমাণ বকা দিলো মেয়েটিকে। আমি ছিলাম শেষ কাস্টমার। দেখলাম পিৎজা ওভেনে বেক হওয়ার সময়টুকুতে হিসেব করছে, মেয়েকে দিয়ে জিনিসগুলো ধোয়াচ্ছে, এর পর আগামীকাল কি কি কিনা লাগবে তার একটি লিস্ট দিচ্ছে।

দৃশ্য:২ 

আমি আর আমার এক বন্ধু পিৎজার এক দোকানে গেলাম। অর্ডার দিলাম৷ খাওয়ার সময় ২৬-২৭ বছরের সুন্দরী, গুড আউটফিট, টল একজন মেয়ে এসে হাসিমুখে জিজ্ঞেস করছে, ' ভাইয়া, আপনার খাবার পছন্দ হয়েছে? কোনো কিছু লাগবে? এক্সট্রা সস? কোক লাগবে?' 

দৃশ্য:৩ 

ঢাকা-কুয়েত ফ্লাইটে একজন এয়ার হোস্টেজ খুব কোমল গলায়, হাসিমুখে জিজ্ঞেস করছে, ' What do you want to take sir, chicken or lamb?' একটু পর আরেকজন এসে জিজ্ঞেস করে, ' Sir, do you need coffee, juice or anything else? ' 

ফ্লাইটে অনেক বাংগালী ছিলো, পাশের রো এর এক লোক ইংরেজি বুঝে না। মহিলা কি বলছে বুঝতে পারছে না। এজন্য মহিলা বুঝানোর চেষ্টা করছে কিন্তু লোক বুঝতে অপারগ। এয়ার হোস্টেজের চেহারার মধ্যে সাফ বুঝা যাচ্ছিলো উনি প্রচন্ড বিরক্ত, রাগ হচ্ছে; হওয়াটাই স্বাভাবিক-কিন্তু কিচ্ছুটি বলতে পারছে না।

এখন একজন নরমাল গৃহিনীর কথা যদি চিন্তা করা হয় তাহলে কি মাথায় আসবে?

'সে ঘুম থেকে উঠার পর ঘরের কাজ করে', 'স্বামীর জন্য রান্নাবান্না করে', 'সন্তানকে স্কুলে পাঠায়', 'রাতে যখন স্বামী বাসায় আসে তখন খাবার সার্ভ করে, স্বামীর সাথে খোশ-গল্প করে ইত্যাদি'। এসব জিনিসই মাথায় আসার কথা। কথা হচ্ছে, যখন একজন মা ঘরের এ কাজগুলো করে তখন সমাজের চোখে তাকে খুব একটা মর্যাদা দেয়া হয় না বা সম্মানের চোখে দেখা হয় না। 

কিন্তু সেম কাজ গুলো লাইক ঘুম থেকে উঠার পর কাজে যাওয়া, বসের জন্য ফাইল জোগাড় করা, বসের অমুক-তমুক কাজে সহায়তা করা,কাস্টমারকে হাসিমুখে ডিল করা, হাজারো রাগ হওয়া সত্তেও কোমল সুরে ফ্লাইট যাত্রী দের হেন্ডেল করা; এসব কাজকে খুব এপ্রিশিয়েট করা হয়। তবে সেইম টাইপের কাজ ঘরে করলে তার ভেলু নেই কিন্তু বাইরে কাজ করলে তার খুব ভেলু থাকে। 

সেই পিৎজা গার্ল রাত ১০.৩০ বাইরে কাজ করছে, তার বসের বকা খাচ্ছে, তাকে কথা শুনাচ্ছে, তাকে দিয়ে জিনিস ধোয়াচ্ছে, পরিষ্কার করাচ্ছে; এই একই কাজ গুলো যদি সে ঘরে করতো তাহলে কি হতো? কিছুই না। 

তাকে কোনো "women empowerment " কিংবা" Independent Women" খেতাব দেয়া হতো না। বলা হতো গৃহিনী। কিন্তু এই কাজ গুলো করাতে সে এখন সমাজের চোখে অন্যরকম, তাকে স্ট্রং ভাবতে হবে কারণ কি? সে "টাকা" কামাচ্ছে, ইকোনমি তে অবদান রাখছে।

এই মেয়ে বসের ঝাড়ি খাচ্ছে, পেসেঞ্জারের সিলি প্রবলেম সলভ করছে; কিন্তু টু'শব্দ করছে না, করলেই চাকরি নট। অথচ স্বামীর সাথে দুনিয়ার চিল্লাচিল্লি, দুনিয়ার তর্ক। স্বামী দু'টো কথা শুনালে তখন হয়ে যায় নারী নির্যাতন।

ইসলাম নারীদের কতটা সম্মান, ইজ্জত, সহজ ও সুন্দর জীবন দিয়েছে তা বুঝতে সক্ষম না এই পাশ্চাত্যের পূজারী মেয়েরা। এদের কাছে বোরখা-হিজাব পরে বাইরে কাজ করাটা সম্মানের কিন্তু হিজাব-বোরখা ছাড়া ঘরের কাজ করাটা অসম্মানের, কষ্টের। তাদের কাছে স্বামীর খেদমত করাটা ইগোতে লাগে কিন্তু বসের কথায় উঠবস করাতে ইগোতে লাগে না।

টাকার পিছনে এতো অন্ধ হয়েছে যে বায়োলজিকে ক্যান্সেল করে, নিজের ফিতরাতের বিরুদ্ধে যেয়ে এমন সব কাজ করছে যেখানে মাতৃত্ব, পারিবারিক বন্ধন, স্বামীর খেদমত ইত্যাদির মতো বিষয়কে বিসর্জন দেয়া লাগছে।

ইসলামের গন্ডি থেকে বেড়িয়ে যখনই কেউ নিজের মতো করে চলতে গিয়েছে, তখনই পশ্চাদে গিয়েছে, ক্ষতিই হয়েছে।


Post a Comment

0 Comments