‘বৃদ্ধাশ্রম’ তারিখঃ ১৪/০৫/১৮
বাবা-মা শব্দটা শুরু হতে হতেই শেষ হয়ে গেলেও শব্দের মানেটা কিন্তু ছোট না। ‘মা’
যেই মা ছোটবেলায় জ্বর হলে সারারাত জেগে সেবা যত্ন করেন, নিজে না খেয়ে সন্তানকে
খাওয়ান আর ‘বাবা’ যার কাঁধে সংসারের পুরো দায়ভারটাই যাকে, মাঝেমধ্যেই সংসারে খরচ
জোগাতে হিমশিম খেতে হয়, সেই বাবাই ছেলের আবদারে নিজে ছেঁড়া সেন্ডেল পড়েও
সন্তানের জন্য নতুন জুতা কিনে নিয়ে আসেন। ছেলে একটা সময় ছোট থেকে বড় হয়,
বিয়ের বয়সে যোগ্য পাত্রীর খোঁজ করা হয়, এমন পাত্রীর যে তাদের ছেলেকে ভালোবাসবে,
তাদের উপযুক্ত সম্মান দিবে, নিজের বাবা মায়ের মতোই। ধুম করে একদিন ছেলের বিয়েটাও
সম্পন্ন হয়। বিয়ের কয়েক মাস পরেই পাল্টাতে শুরু করে ছেলের ব্যবহার। বৌ এর নানা
মিথ্যে অভিযোগের মাঝে বাবা-মা মুহূর্তেই হয়ে ওঠেন সংসারের বোঝা। শুরু হয় বাবা-মায়ের
সাথে কারণে-অকারনে বাজে ব্যবহার। বয়সের সাথে বৃদ্ধ বাবা-মায়ের স্মৃতিশক্তিটাও
কমে, আগের মতো তেমন কিছু মনে থাকে না, কানেও একটু কম শোনেন। এক কথা দুই-তিনবার
জিজ্ঞেস করলেই ওদের মেজাজ দেখে কে! অথচ, যখন ছেলেটা যখন ছোট ছিলো, মায়ের কাছে এক
কথা বারবার বলতো, তখন কিন্তু মা বিরক্ত হতেন না, হাসিমুখেই বারবার সকল প্রশ্নের
উত্তর দিতেন। একজন মা যিনি দীর্ঘ ৮০ সপ্তাহ সন্তানকে গর্ভে ধারণ করেন, না দেখেই
তাকে ভালোবাসেন, সহ্য করেন অসহ্য সন্তান প্রসবের যন্ত্রণা। অথচ যে মায়ের মুখ থেকে
কথা বলা শিখলো, যে বাবার হাত ধরে শিখলো হাঁটাচলা, সেই বাবা মাকে গালি দিতেও
ইতস্তবোধ করেন না। একজন ছেলে যার উপর বাবা-মা ভরসা করে থাকেন যে বৃদ্ধ বয়সে ছেলে
হবেন তাদের লাঠি। কিন্তু বউ এর মিথ্যে অভিযোগের মুখে সে বদলে যায়, সে এতোটাই
অমানুষ পরিণত হয় যে যাকে ছাড়া এই দুনিয়ার মুখ দেখতে পেতো না, যে মায়ের পদতলে
সন্তানের বেহেশত তাদেরকে ঘাড়ে ধাক্কা দিতেও এতটুকু হাত কাঁপে না। টেবিলের পুরনো
বইয়ে যেভাবে ধুলো জমে, সেইভাবেই ধুলো জমা শুরু করে সন্তান ও বাবা মায়ের
সম্পর্কের মাঝেও। অবশেষে আসে সেই দিন যেদিন প্রথম পা পড়ে বৃদ্ধাশ্রমে। সেই ছেলে কতোটাই
না নিষ্ঠুর, যে একটা স্বার্থপর,নির্লজ্জ মেয়ের জন্য ভালোবাসার মানুষ দুটির জায়গা
করে দেয় বৃদ্ধাশ্রমে। ‘বৃদ্ধাশ্রম’ যেখানে নাকি থাকেন অসহায় বৃদ্ধ বাবা-মায়েরা।
বাসায় আধুনিক জিনিসপত্র রাখার জায়গা হলেও জায়গা হয় না শুধু বৃদ্ধ দুটি তাজা প্রাণের।
তারা হয়তো ভুলে যায় তারাও একদিন বৃদ্ধ হবে, তাদের সন্তানও ফেলে দিয়ে আসবে কোন
এক ‘বৃদ্ধাশ্রমে’। ছেলের হাতে অন্যদের জন্য সময় হলেও সময় হয় না বৃদ্ধ বাবা-মাকে
এক পলক দেখতে আসার। বৃদ্ধাশ্রমের দরজার দিকে তাকিয়ে উনারা ভাবেন হয়তোবা একদিন নিজের
ভুল বুঝে ফিরে আসবেন উনাদের ছেলে, ক্ষমা চেয়ে নিয়ে যাবে চিরচেনা সেই ঘরে।হয়তোবা
কারো এই ইচ্ছে পূরণ হয়, হয়তোবা কারো হয়না, বৃদ্ধাশ্রমের সেই ছোট কামরাতেই আলিঙ্গন
করতে হয় মৃত্যুকে।
0 Comments