"কয়েকদিন পোস্ট করা হয় না। আজ কিছু গল্প বলা যাক"


 
কয়েকদিন পোস্ট করা হয় না। আজ কিছু গল্প বলা যাক।

১) আমেরিকার নর্থ ডাকোটাতে থাকতো স্টিভেন এডওয়ার্ড নামে এক লোক। তার গার্লফ্রেন্ডের নাম এনা, তারা দুজন বিবাহিত না হলেও দীর্ঘদিন ধরে একসাথে বাস করছিল।
একদিন স্টিভেন একটা ই-মেইল পায়। মেইলটি পাঠিয়েছে এক উকিল। যে বলছে, স্টিভেনের এক আত্মীয় মারা গেছে, এবং স্টিভেন তার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী। সম্পত্ত্বির পরিমাণও অনেক- ৩০ মিলিয়ন (প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা)। এখন সেই উকিল নর্থ ডাকোটাতে আসছে কিছু লিগাল পেপার নিয়ে, যেগুলোতে স্টিভেন স্বাক্ষর করলেই সে উক্ত সম্পত্ত্বির মালিক হয়ে যাবে।
স্টিভেন তো মহাখুশি। সে সারাজীবনে কোনোদিন এত টাকা দেখেনি। নানান প্লান করছে। এর মধ্যে সেই উকিলের আসার দিন ঘনিয়ে এলো। সেদিন সকালে স্টিভেন, তার গার্লফ্রেন্ড এনা এবং তাদের কিছু বন্ধুবান্ধব এয়ারপোর্টে গেলো।
এয়ারপোর্টে যাবার পর থেকেই স্টিভেন অসুস্থ হয়ে পড়লো। হাটতে পারছিল না, পেটে ব্যাথা পাচ্ছিল। কয়েকবার বমিও করলো। এদিকে সেই উকিলের দেখা নেই। ঘন্টার পর ঘন্টা যায়। প্রায় সারাদিন ওয়েট করার পর তারা ধরেই নিল যে সে উকিল আর আসবে না। তারা সবাই এয়ারপোর্ট থেকে চলে আসলো এবং স্টিভেন হাসপাতালে ভর্তি হলো।
এর দুই দিন পর স্টিভেন মারা যায়।
কিন্তু স্টিভেনের বন্ধুদের সন্দেহ হয়। তারা ডাক্তারকে স্টিভেনের রক্ত পরীক্ষা করতে বলে। পরীক্ষায় রক্তে বিষের প্রমাণ পাওয়া যায়।
পুলিশ এনাকে গ্রেফতার করে। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর এনা স্বীকার করে, এয়ারপোর্টে যাবার আগে সে স্টিভেনের চায়ে বিষ মিশিয়ে দিয়েছিল। সন্দেহ এড়াতে সে স্লো কাজ করে এরকম এক ধরণের বিষ মেশায়। যে কারণে স্টিভেন দুই দিন পর মারা যায়।
কিন্তু কেন মারলো তার সবচেয়ে কাছের মানুষকে? ওয়েল, আমেরিকার কিছু রাজ্যে 'ল'ফুল ওয়াইফ নামে এরকম আইন আছে, দীর্ঘদিন বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড একসাথে থাকলে তাদেরকে আইনত স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বিবেচনা করা হবে। আর স্টিভেনকে মারতে পারলে তার ল'ফুল ওয়াইফ হিসেবে সে তার সম্পত্ত্বি মানে ওই ৩০ মিলিয়নের মালিক হবে।
কিন্তু পুলিশ তাকে জানায়, অন্য রাজ্যে থাকলেও নর্থ-ডাকোটাতে এরকম কোনো আইন নেই। মানে সে কিছুই পাবে না!
তবে সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যপার হলো ওই ৩০ মিলিয়ন ডলার, ওটার আসলে কোনো অস্তিত্বই নেই। যে মেইলটা এসেছিল তা স্পাম মেইল। মানে লটারি জেতা, নাইজেরিয়ার রাজপুত্র আর থাইল্যান্ডের রাজকুমারী টাইপের ভুয়া ব্যাপার।
পয়সার লোভে নিজের কাছের মানুষকে নিজ হাতে মারলো, পয়সাও পেলো না, বাকি জীবন জেলেই কাটবে।
গত মাসের ঘটনা, খবরের লিংক কমেন্টে পাবেন।
২) ১৯৯৬ সালে ডেনিস রোসি নামের এক মহিলা লটারিতে দেড় মিলিয়ন ডলার জেতেন। কিন্তু তার স্বামীকে কিছুই জানান নি এবং এর এগারো দিন পর স্বামীকে ডিভোর্স দেন। লটারির সমস্ত টাকা নিজে ভোগের উদ্দেশ্যে ২৫ বছরের সংসার ছেড়ে চলে যান।
তার স্বামী থমাস কিছুই জানতেন না। কিন্তু দুই বছর পর তার বাসায় একটা চিঠি আসে, যা ছিলো ওই লটারি প্রতিষ্ঠানের। তিনি তখনই প্রথম জানতে পারেন এ ব্যাপারে।
ব্যাপারটা আদালতে যায়। রোসি বিয়ের কথা গোপন করেছিল তাই জালিয়াতির অভিযোগে আদালত ওই লটারির পুরো টাকা থমাসকে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। যেহেতু লটারি জেতার সময় তারা বিবাহিত ছিলেন।
মানে ব্যপারটা হলো, রোসিকে তার হাতে থাকা টাকা এবং দুই বছর ধরে যা খরচ করেছে সব থমাসকে দিতে হবে। তার উপর সমস্ত আইনি খরচ তাকেই বহন করতে হবে!
সুইট জাস্টিস!
৩) এই গল্পটা রেডিট থেকে নেওয়া। এক ছেলে এক পশ্চিমা ভার্সিটিতে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিলো। ছাত্রছাত্রীরা তাকে পছন্দ করে নি। এরই মধ্যে এক মেয়ে তার নামে অভিযোগ দিল যে প্রফেসর তাকে চিমটি দিয়েছে ও চুলে হাত দিয়েছে।
এখন পশ্চিমে এরকম অভিযোগে কী হয়? একদম লাইফ শেষ। ওই চাকরি যাবে, সমস্ত সার্টিফিকেট যাবে, রেপুটেশন যাবে, একটা কফিশপেও জীবনে চাকরি নিতে পারবে না - লাইফ বেসিকালি ওভার। মী-টু এর সময় হাজার হাজার ঘটনা ঘটেছে এরকম।
যাইহোক তদন্তে কিছু প্রমাণিত হলো না। কিন্তু প্রফেসর কোনোভাবেই হাল্কাভাবে নিলেন না- তার পুরো লাইফই প্রায় শেষ করে দিয়েছিল এই মেয়ে।
ভার্সিটির নিয়ম ছিল, অ্যাটেন্ডেন্স রেট ঠিকমত না থাকলে ফেইল আসবে। ফলে প্রফেসর ওই মেয়ের অ্যাটেন্ডেন্স দেওয়া বন্ধ করলেন, যদিও মেয়ে ক্লাসে আসত। যথারীতি ফেইল আসলো। মজার ব্যাপার হলো, ঐ মেয়ে স্কলারশীপ নিয়ে পড়ছিল। আর কোনো সেমিস্টারে ফেইল আসলে স্কলারশীপ বাতিল হয়ে যাওয়ার নিয়ম ছিল।
এখন স্কলারশীপ কিন্তু কেবলই পড়ার খরচের না, থাকা-খাওয়াসহ নানান খরচের জন্য। ওই মেয়ে সব হারালো।
প্রফেসর লিখেছেন, "কিছুদিন পর তার এক ক্লাসমেটের কাছে খোঁজ নিলাম। সেই মেয়েকে থাকার জায়গা থেকে বের করে দিয়েছে, সে এখন হোমলেস। আপনারা খারাপ ভাবতে পারেন, আমি কেয়ার করি না। আমার পুরো লাইফ অলমোস্ট নষ্ট করে দিয়েছিল। আমি যা হারাতে বসেছিলাম তার তুলনায় এ তো কিছুই না।"
৪) এবার একটা দেশী গল্প। এক ভাই বিয়ে করেছেন। কিছুদিন পর তার হোয়াটসঅ্যাপে কিছু ছবি আর ভিডিও আসলো। বুঝে গেছেন মেবি, তার নতুন স্ত্রীর। ভাই পুরো বিধ্বস্ত। বিয়ের আগে অনেকবার বলেছিলেন, তোমার কোন অতীত রিলেশন থাকলে বলো, আমি নিজেই সম্বন্ধ ভেঙ্গে দিয়ে চলে যাবো, কোনো সমস্যা নেই। ভাবী একেবারে কসম টসম করে , ছিঃছিঃ কি বলেন এগুলো হ্যান ত্যান। এতবড় ধোঁকার পর সিদ্ধান্ত নিলেন ভাবীকে মেরেই ফেলবেন। কিন্তু নতুন পাওয়া চাকরী, কর্মস্থল সংসার সব হারাবেন ভেবে সরে আসলেন।
তাদের সংসার ভাঙ্গার পথে। ভাবী প্রায় সময় পায়ে ধরেন। ভাইয়ের বক্তব্য, আমি বিয়ের আগে একটাই জিনিস চেয়েছিলাম চরিত্র, আর কোনো কিছু দেখিনি।
ভাইয়ের অবস্থা খারাপ হতে থাকলো। ঠিকমত বাসায় ফেরেন না, খাওয়াদাওয়া করেন না, ভাইয়ের সাথে আড্ডাও আর দেওয়া হয় না।
একদিন আ#ত্ম#হ#ত্যার চেষ্টা করলেন। ভাইয়ের আম্মা আর ছোটভাই তাড়াতাড়ি চলে আসায় আর হলো না।
ভাইয়ের ব্যপারটা এলাকার কিছু ছেলেরা আর তার উনার ভার্সিটির ফ্রেন্ডরা জানতো।
এরই মধ্যে করোনা চলে এলো। ভাই ডিভোর্সের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শুধু ডিভোর্সই না, উনি চাচ্ছিলেন তার জীবনটা যেভাবে এলোমেলো করে দিলো, ওই মেয়ের উপর প্রতিশোধ নিতে।
হঠাত একদিন ভাবি বেশ অসুস্থ হয়ে পড়লেন, মারাত্মক পেটেব্যাথা। এখানে বলে রাখা ভালো, ভাবীর বাপের বাড়ির লোকজন তেমন কেয়ার করতো না।
অ্যাপেন্ডিসাইটিস ধরা পড়লো। লকডাউনের কারণে ছোট একটা প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করলেন।
এরপর ঘটে গেলো ভয়ঙ্কর এক ঘটনা। ভাই যে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলেন ওই হাসপাতালে উনার পরিচিত এক ডাক্তার ছিল। উনি মাঝেমধ্যে যেতেন। বিয়ের পরেও গেছেন, এবং ঐ ডাক্তার ভাবীর দুশ্চরিত্রের কথা জানতেন।
তিনি এক মারাত্মক পরামর্শ দিলেন। বললেন, যেহেতু ওটিতে নেওয়া হচ্ছে, ওখানে যদি ভাবীর ফ্যালাপিয়ান টিউবের কিছু পার্ট কেটে ফেলা হয়, উনি আর কোনদিন মা হতে পারবেন না।
ভাই তখন প্রতিশোধের নেশায় একরকম অন্ধ। উনি সায় দিলেন।
এরপর এক মাসের মত ভাবী ভাইদের ওখানে ছিলেন। তার কয়েক সপ্তাহ পর ভাই কানাডা চলে গেলেন, এই পোস্ট লেখা পর্যন্ত ওখানেই আছেন। ওখানে যাবার পর ডিভোর্স পেপার তার শ্বশুরবাড়ি পাঠানো হয়।
তবে ঘটনা এখনো শেষ হয়নি।
বাইশ সাল মানে গতবছরের শুরুতে ভাবির আরেক জায়গায় বিয়ে হয়। সেই লোক ছিল একটু বয়স্ক। ভাই একদিন তাকে ফোন করে সব বলে দেন। ফলাফল জুলাইয়ের দিকে আবারো ডিভোর্স।
এরপর ভাবীর ফ্যামিলি ট্রাই করে যাচ্ছে বিয়ের জন্য। কিন্তু এলাকায় সবাই জেনে গেছে তার আর বাচ্চা হবে না। তার উপরে উনার সেইসব ফটো-ভিডিও সব এলাকার ছেলেদের হাতে হাতে ছিল। ফলে পাত্রপক্ষ এসব শুনে আর এগোয় না।
ভাই পরে আর বিয়ে করেছে কিনা জানা যায়নি। তবে এই ছিল তার প্রতিশোধের গল্প।

Post a Comment

0 Comments