"লোকটা এক দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারী চাকরি করেন"

 


৫) লোকটা এক দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারী চাকরি করেন। অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ। মানে সরকারী চাকরি পেলে যা হয় আরকি - পাত্রীর লাইন পড়ে যায়।

এতদিন সিঙ্গেল থাকার পর বিয়ে। শহরে বাসা নিলেন। ভেবেছিলেন গ্রামের সহজ-সরল মেয়ে, সুখে সংসার করবেন।
কিন্তু বিয়ের পর থেকেই স্ত্রীর সংসারে মন নেই। সব সময় মুখ ঝামটা ভাব। ইন্টিমেসি বলতে গেলে কিছুই হয় না।
বিয়ের ছয় মাসের মধ্যে একবার গর্ভপাত ঘটল।
এসব কারণে তার ধারণা ছিল, নতুন বউ, ক'দিন পরে ঠিক হয়ে যাবে।
কিন্তু তার কোনো লক্ষণ নেই।
লোকটার সন্দেহ হলো। স্ত্রীর ফোনে স্পাইওয়ার বসালেন। যা ভেবেছিলেন তাই। স্ত্রী তার সাবেক প্রেমিকের সাথে ঘনিষ্ট যোগাযোগ রেখে চলেছে। এবং মাঝে মাঝে তিনি অফিসে থাকাকালীন শুয়েও পড়ছে।
মানুষটার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। তার বউ তিনি বাসায় থাকাকালীন সময়েই বাথরুমে গিয়ে পরকীয়া প্রেমিককে ন্যুড পাঠাচ্ছে।
তবে তিনি মাথা গরম করলেন না। স্ত্রীকেও একদমই কিছু বললেন না। বরং পুরো ব্যাপারটা স্টাডি করার চেষ্টা করলেন। ওই ছেলের ব্যাপারে খোঁজখবর নিলেন।
ছেলেটা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জটে পড়ে একরকম বেকার। বাপের বড় ছেলে। প্রায় নিম্নবিত্ত, একই শহরে মেসে থাকে। মেয়ের ফ্যামিলি ছেলে ও ওই রিলেশনের ব্যাপারে জানতো।
তার সাথে তুলনাই চলে না, লোকটার পরিবার উচ্চমধ্যবিত্ত, বাবা মারা যাবার পর সম্পত্ত্বির মালিক হয়েছেন। মা অনেক আগে থেকেই নেই।
মানে মেয়েটার ফ্যামিলি দেখেছে, পাত্রের ফ্যামিলি বড়লোক, শ্বাশুড়ির ঝামেলা নেই, গছিয়ে দিয়েছে। আবার মেয়েটাও দেখেছে সেই বয়ফ্রেন্ড একই শহরে থাকে, স্বামীর পয়সায় বয়ফ্রেন্ডের সাথে ফুর্তি, কোনো সমস্যা নেই। এবং হয়েছেও তাই।
এর মধ্যে ঘটে গেল আসল ঘটনা। লোকটা তো স্পাইওয়ারের মাধ্যমে স্ত্রীর উপর নজর রাখছিলেন। সন্দেহ এড়াতে স্ত্রীর ফোন কখনোই হাতে নিতেন না। একদিন দেখতে পেলেন, তার স্ত্রী ও সেই ছেলে প্লান করছে তাকে ব্লাকমেইল করার। মানে ওই ছেলে বুদ্ধি দিয়েছে, যেহেতু লোকটা সরকারী চাকরি করে, নারী নির্যাতন কিংবা যৌতুক মামলা দিলে তার চাকরি চলে যাবে। আর এই চাকরি খেয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে টাকা আদায় করবে। কাবিনের টাকা আগেই পরিশোধ করা ছিল। টাকা পাবার পর লোকটাকে ডিভোর্স দিয়ে সেই বয়ফ্রেন্ডকে বিয়ে করবে। বয়ফ্রেন্ড এখনি বাড়ি জানাবে না, যেহেতু বড় ছেলে।
তাদের ধারণা ছিলো, সরকারি চাকরি যাবার ভয়ে মেয়েটার হাজব্যান্ড তাদের দাবী মেনে নেবে।
কিন্তু লোকটা অন্য কিছু প্লান করেছিলেন।
তিনি চাকরীটা ছেড়ে দিলেন। ছেড়ে দিলেন বলতে অব্যাহতিপত্র জমা দিয়েছেন, অফিসিয়ালি মঞ্জুর হয়নি। স্ত্রীকে জানাতেই ব্যপক হাউমাউ জুড়ে দিলো - কিভাবে পারলে, এখন আমরা খাবো কী ইত্যাদি ইত্যাদি।
এরপর ওই ছেলের সাথে দেখা করলেন। বললেন, দেখো, তোমরা আমার সাথে জিততে পারবে না। অলরেডি হয়ত বুঝে গেছো।
লোকটাকে অবাক করে দিয়ে ওই ছেলেটা জানালো, আসলে বিয়ের কোনো প্লানই তার ছিল না। ফ্রি পাওয়া যাচ্ছিল তাই। আর ঐ ব্লাকমেইলের টাকাটা পেলে সে হাওয়া হয়ে যেত। আর যেহেতু বড় ছেলে, তার বাবা কোনোদিনই এরকম ডিভোর্সি মেয়েকে মেনে নিতেন না।
ছেলেটা আরো একটা ভয়ংকর তথ্য দিলো। যে গর্ভপাত হয়েছিল সেটা আসলে ছিল অ্যাবর্শন। মেয়েটা স্বামীর বাচ্চা রাখতে চায়নি। বরং ডিভোর্সের পর বয়ফ্রেন্ড্রের বাচ্চাই পেটে রাখতে চাচ্ছিল। আর অ্যাবর্শনের পর মেয়েটার ডিসচার্জের একটা সমস্যা দেখা দেয়। যেকারণে তাদের 'ব্যাভিচারি লাইফ' অতটা ভালো যাচ্ছিল না। এবং ছেলেটা মেয়েটার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছিল।
লোকটা স্বামী হয়েও স্ত্রীর এসব ব্যাপারে জানতেন না! জানতো পরকীয়া প্রেমিক।
স্ত্রীকে জানালেন তারা বিদেশে সেটেল হবেন। উনার আত্মীয়া আছেন গ্রিসে। সেখানে ইকোনোমিক সিটিজেনশীপ নেবেন (মানে ইনভেস্ট করলে যে নাগরিকত্ব দেয়)।
স্ত্রীকে পাসপোর্ট করালেন, তার আগেই করা ছিল। অ্যাপ্লাই করলেন ভিসার, ইন্টারভিউয়ের অপেক্ষায় আছেন।
এরমধ্যে উনার স্ত্রীর আবার সেই পরকীয়া প্রেমিকের সাথে ব্রেকআপ হয়ে গেছে। বলতে গেলে লোকটা ছেলেটাকে ফোর্স করেই করিয়েছেন। তাকে চাপ দিলেন সে যেন অন্য কোথাও বিয়ে করে নেয়। বাসায় জানিয়ে দেবার ভয় দেখিয়ে সেদিকেও এগিয়ে ফেললেন। বেকার হওয়ায় মেয়ে খুঁজতে সমস্যা হচ্ছিল। লোকটা এই পর্যন্ত বললেন, তার বিয়ের খরচ দিয়ে দেবেন।
তবে এতদিনেও স্ত্রীকে পরকীয়ার ব্যপারে একটা প্রশ্নও করেন নি। এজন্য স্ত্রীও তাকে বিশ্বাস করতো। সেও বিদেশ যাবার প্রিপারেশন নিতে থাকলো।
হঠাত একদিন তিনি একাই বিদেশ চলে গেলেন। একদম কিছু না জানিয়েই। তার স্ত্রী কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না।
বুঝতে পারলো ডিভোর্স লেটার হাতে পাবার পর। এও বুঝতে পারলো, সে সব কুলই হারিয়েছে। আইনত স্ত্রী না থাকায় স্বামীর সম্পত্ত্বির কিছুই পাবে না। বয়ফ্রেন্ড অন্য কোথাও বিয়ে করছে। আর তার দুশ্চরিত্রের খবর কেবল গ্রামে যাওয়াটাই বাকি।
(এটা ২০১৮-১৯ সালের ঘটনা। কিন্তু কিছুদিন আগে ফেসবুকের একটা পপুলার গ্রুপে একটা মেয়ে হেল্প চেয়ে পোস্ট দেয়। যার ঘটনা প্রায় একই ছিল, স্বামী দুই বছর ধরে পাসপোর্ট ভিসার নাটক করে বিদেশে চলে গেছে। সন্দেহ হচ্ছিল, সেই মেয়েই কিনা। পরে টাইমলাইন মিলিয়ে দেখা যায় একই মেয়ে না। যে লোকটার ঘটনা বলা হলো, তিনি আত্মীয় না, তবে পরিচিত।)

Post a Comment

0 Comments