"নারীবাদের প্রতিষেধক"

 

ফেমিনিজম একটা নতুন ও প্যাকেজ সমস্যা। এ কারণে এই আইডিয়া মোকাবেলা করা একটু কমপ্লেক্স।
প্যাকেজ সমস্যা এই কারণে, ফেমিনিজম কোনো একক আইডিয়া না, এটি লিবারেলিজম বা সেকুলারিজমের সাথে আসে। সুতরাং, একটা মেয়ে ফেমিনিস্ট মানে সে যে শুধুই ফেমিনিস্ট তা না, বরং সে একইসাথে এলজিবিটির সমর্থক, ডাইভার্সিটি নিয়েও চেঁচামেচি করে।
নতুন সমস্যা এই কারণে, যে এটি অনেক নতুন ও অল্পবয়স্ক আইডিওলজি। বর্তমানে আমেরিকা বিশ্বক্ষমতায়। সুতরাং, আমেরিকা যা বলবে সেটাই মানবাধিকার, সেটাই শিক্ষিত মানুষের চিন্তা। যদি কেউ না মানে তাহলে সে অসভ্য এবং গুহায় বাস করে - দুনিয়া এটাই মেনে নিয়েছে।
এবার সত্তর দশকের কথা ভাবুন। তখন পর্যন্ত আমেরিকাতে নারীদের আলাদা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার অনুমতি ছিলো না, স্বামীর অনুমতি ছাড়া চাকরিতে যেতে পারত না।
এগুলো এখন বহাল থাকলে কী হতো? যেসব দেশে নারীরা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারত তাদেরকেই ধরা হতো ব্যাকডেটেড, অসভ্য-অশিক্ষিত।
এখন ফেমিনিজম যেহেতু তুলনামূলক নতুন আইডিয়া, সেহেতু এই আইডিয়া ঠেকানোর উদাহরণ এখনো তেমন হয়ে উঠতে পারেনি। পশ্চিমা দেশগুলোতে যারাই চেষ্টা করেছে, সামাজিক আর প্রশাসনিক চাপে একদমই এগোতে পারেনি। এক অ্যাবর্শন বাতিল করতে ADF এর লেগেছে দশ বছর। সেখানে পশ্চিমা দেশগুলোতে ফেমিনিজমের কোর কাউন্টার, যেমন পাবলিক প্লেসে নারীর উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণ তো পশ্চিমা ডানপন্থীরা স্বপ্নেও ভাবতে পারবে না।
বিকল্প বলয়, অর্থ্যাৎ রাশিয়া-চায়না-ইরান পলিটিকালি তো পশ্চিমবিরোধ। কিন্তু সিস্টেমেটিক ফেমিনিজম দুরীকরণে তাদের ব্যর্থতা বাকি দুনিয়ার মতই। কারণ ব্যাপারটা পলিটিকাল। ইরানে নারীদের গ্রাজুয়েশনের হারসহ নারী স্বাক্ষরতার কিন্তু আমেরিকার চেয়ে বেশী। তাই বলে কী পশ্চিম তাদের নারীবিদ্বেষের অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়েছে? ইউরোপের চাইতে মেইনল্যান্ড রাশিয়াতে ডিভোর্সের হার বেশী।
দুনিয়া নারীবাদ ঠেকাতে তেমন সাফল্য পায়নি মুলতঃ টাকা আর ডেমোক্রেসির কারণে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকার সবচেয়ে সফল ইনভেস্টমেন্ট ছিলো এই নারী অধিকারের পিছনে ইনভেস্ট করা। একটা দেশের নারীদের করাপ্ট করে ফেলো, ঐ দেশ একদম পায়ের কাছে এসে পড়বে। দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণপূর্ব এশিয়া সহ পুরো আফ্রিকাতে এই মডেল একদম মহৌষধীর মত কাজ করেছে। সব দেশে প্যাটার্নও সেইম।
আর ডেমোক্রেসি। ডেমোক্রেসিতে ক্ষমতা ভাগ হয়ে থাকে। আর এর প্রবণতাই এমন, সমাজের কিছু খারাপ মানুষকে পাওয়ারে তুলে আনে। আমেরিকার জন্য ব্যাপারটা এমন হয়ে গেলো, কিছু লুটের পয়সা সামনে ঝুলিয়ে দাও, ফেমিনিজম কাউন্টার করা তো দূরের কথা, কে কত বড় সিম্প সেটা প্রমানে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কম্পিটিশন শুরু হবে। সরকারী হোক বা বিরোধীদল, আগে ঐ নারী ক্ষমতায়নের ট্যাক্স দিয়ে এসে তবেই ক্ষমতার স্বপ্ন দেখতে হবে।
২০২১ সালে তালেবান যখন ক্ষমতায় আসে, পুরো দুনিয়ার ডানপন্থীরা তাকিয়ে ছিলো ওদিকে। কারণ এটা খুবই ইউনিক বিজয়। প্রথমবারের মত কোন দেশ সাংস্কৃতিকভাবে পশ্চিমাদের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। তাই ডান-বাম দুই পক্ষই তাকিয়ে ছিলো, সবার উপরে বারবার উঠে এসেছে এই নারী প্রসঙ্গ। কারণ আমেরিকা এমন এক যুদ্ধের মাধ্যমে আফগানে নারীবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছে যেখানে দিনে ৩০০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে (হ্যাঁ, প্রতিদিন ৩০০০ কোটি টাকা, ২০ বছর ধরে)। তার উপর কাবুল ইউনিভার্সিটির কালচারাল অনুষ্ঠানে মেয়েরা নাচবে, তার বাইরে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছে ১০টার মত মেশিনগান।
এই পরিমাণ টাকা আর ক্ষমতার মাধ্যমে তো ভুতের মন্তরকেও সংবিধান বানিয়ে দেওয়া যায়।
আমি এই আর্টিকেল লেখার আগে প্রায় ৩ বছর অবজার্ভ করেছি। দেখি এত কমপ্লেক্স একটা সমস্যার সমাধান তারা কিভাবে করে। কারণ এটা বিশ্বে প্রথমবারের মত ঘটছে যে, নারীবাদ একেবারে মৌলিকভাবে নিশ্চিহ্ন করা হচ্ছে।
আমার কালেক্ট করা ডাটা নিচে দিচ্ছি। পরে প্রপার বিশ্লেষণের সুযোগ হলে সেটাও দেওয়া হবে। এখানে তারিখসহ দেওয়া হলো। সব খবর মিডিয়া থেকে নেওয়া।
৩০-আগস্ট-২০২১ সহশিক্ষা এবং পুরুষ শিক্ষক কর্তৃক নারীদের পড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়
৮-সেপ্টেম্বর-২০২১ ইউরোপিয়ান এনজিওগুলোর মদদে কিছু ফেমিনিস্ট সংগঠন মিছিলের চেষ্টা করলে পুর্বানুমতি ছাড়া বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করা হয়
১২-সেপ্টেম্বর-২০২১ মেয়েদের জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা নিষিদ্ধ করা হয়
১৭-সেপ্টেম্বর-২০২১ নারীবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে 'সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ' মন্ত্রণালয়ে পরিণত করা হয়
২০-সেপ্টেম্বর-২০২১ পেশাজীবী নারীদের পরবর্তি নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ঘরে অবস্থান করতে অনুরোধ জানানো হয়।
২৯-সেপ্টেম্বর-২০২১ কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের নিষিদ্ধ করা হয়।
২৩-নভেম্বর-২০২১ আফগান বার অ্যাসোসিয়েশনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়
২৬-ডিসেম্বর-২০২১ মাহরাম ছাড়া নারীদের ৭২ কিলোমিটারের বেশী দূরে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হয়।
২৯-ডিসেম্বর-২০২১ বলখে নারীদের কমন গোসলখানা নিষিদ্ধ করা হয়
৩-জানুয়ারি-২০২২ নানগারহার ও কুনার প্রদেশে বালিকা বিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়
৭-জানুয়ারি-২০২২ হেরাতে রেস্টুরেন্ট মালিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়, তারা যেন মাহরাম ছাড়া (একা বা পরপুরুষের সাথে এসেছে) - এরকম নারীকে সার্ভ না করে।
২-মার্চ-২০২২ নারীদের নির্দেশ দেওয়া হয়, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসার সময় যেন অবশ্যই সাথে মাহরাম থাকে।
১৩-মার্চ-২০২২ প্রতিটি অফিসে নারী ও পুরুষের কর্মস্থল আলাদা করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
১৭-মার্চ-২০২২ ঘোষণা করা হয়, মেয়েদের স্কুলগুলো খুলে দেওয়া হবে।
২৪-মার্চ-২০২২ মেয়েদের জন্য ৭ম শ্রেণী পর্যন্ত স্কুল খুলে দেওয়া হয়।
২৪-মার্চ-২০২২ আফগানের আমীর হাইবাতুল্লাহ এক মৌখিক আদেশের মাধ্যমে অফিসে কর্মজীবি নারীদের নারীদের উপস্থিতি নিষিদ্ধ করেন।
২৭-মার্চ-২০২২ নারীদের জন্য মাহরাম ও উপযুক্ত কারণ ছাড়া বিদেশ ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হয়।
৬-এপ্রিল-২০২২ পাবলিক পার্কগুলোতে নারী ও পুরুষ দর্শনার্থীদের ভ্রমণের জন্য আলাদা দিন ঠিক করে দেওয়া হয়।
২৪-এপ্রিল-২০২২ প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ও ছাত্রীদের আলাদা ক্লাসরুমের ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
৫-মে-২০২২ নারীদের জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করা বন্ধ করা হয়।
৭-মে-২০২২ মাহরাম ছাড়া নারীদের গণপরিবহনে যাতায়াত নিষিদ্ধ করা হয়।
৭-মে-২০২২ সরকারীভাবে হিজাব পরার নির্দেশনা প্রকাশ করা হয়।
১৬-মে-২০২২ আফগান মানবাধিকার কমিশন বিলুপ্ত করা হয়।
১৯-মে-২০২২ টিভির সংবাদ পাঠিকাদের নেকাব পরতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
১-জুন-২০২২ গজনীতে বিদ্যালয়ে যাবার পথে ছাত্রীদের প্রপার হিজাব পরার নির্দেশ দেওয়া হয়।
১৮-জুলাই-২০২২ অর্থমন্ত্রনালয়ে কর্মরত নারীদের পরিবর্তে তাদের পরিবারের একজন করে পুরুষ সদস্যকে চাকরি দেওয়া হয়।
১০-অগাস্ট-২০২২ ফ্লাইট-অ্যাটেন্ড্যান্ট হিসেবে নারীদের চাকরি করা নিষিদ্ধ করা হয়।
১৬-অগাস্ট-২০২২ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়।
২৩-অগাস্ট-২০২২ নারীদের জন্য নারীদের জন্য 'নৈতিকতা বিভাগ' নামে পুলিশে নতুন দপ্তর খোলা হয়।
২৫-অগাস্ট-২০২২ যেসকল পার্কে এখনো নারীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় নি, সেখানে নারীদের যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়।
২৯-অগাস্ট-২০২২ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রীদের জন্য পর্দা বাধ্যতামূলক করা হয়।
৮-সেপ্টেম্বর-২০২২ সকল সরকারী অফিসে ইসলাম শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়।
২৬-সেপ্টেম্বর-২০২২ টিভির অনুষ্ঠানে আসা নারী অতিথিদের নেকাব পরা বাধ্যতামূলক করা হয়
৭-অক্টোবর-২০২২ ছাত্রীদের জন্য কৃষি শিক্ষা, সাংবাদিকতা, ভেটেনারি ইত্যাদি মেজর না নিতে বলা হয়।
২৮-অক্টোবর-২০২২ সাংবাদিক সমিতির কমিটি থেকে নারী সদস্যদের বাদ দেওয়া হয়।
১০-নভেম্বর-২০২২ পাবলিক জিম নারীদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়।
১৪-নভেম্বর-২০২২ ইসলামী শাস্তিবিধি হুদুদ ও কিসাস চালু করা হয়।
২০-ডিসেম্বর-২০২২ পাবলিক ও প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলো থেকে ছাত্রীদের নিষিদ্ধ করা হয়।
২২-ডিসেম্বর-২০২২ এনজিও কর্তৃক গোপনে পরিচালিত প্রাইভেট স্কুলগুলোতে ষষ্ঠ শ্রেণীর উপরে ছাত্রীদের নিষিদ্ধ করা হয়।
২৪-ডিসেম্বর-২০২২ আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোতে কাজ করা নারীদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়।
২৪-ডিসেম্বর-২০২২ সরকারীভাবে স্পষ্ট করা হয়, শুধুমাত্র সেকুলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকেই নারীদের নিষিদ্ধ করা হয়েছে, ধর্মীয় উচ্চশিক্ষা তথা মাদ্রাসা থেকে নয়।
২৭-ডিসেম্বর-২০২২ কাবুলে নারীদের দ্বারা পরিচালিত কিছু রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়।
১৬-জানুয়ারি-২০২৩ ট্রাভেল এজেন্সীগুলোকে মাহরাম ছাড়া কোনো নারীর কাছে টিকেট না বিক্রি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
২১-জানুয়ারি-২০২৩ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিপরীক্ষার বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, সেখানে ছাত্রীদের আবেদন করতে নিষেধ করা হয়েছে।
২৫-জানুয়ারি-২০২৩ নারী ও পুরুষ শিক্ষকদের আলাদা হাজিরা খাতায় স্বাক্ষরের নির্দেশ দেওয়া হয়।
১-ফেব্রুয়ারি-২০২৩ নারী স্বাস্থ্যকর্মীদের মাহরামসহ ভ্রমণের মৌখিক নির্দেশ দেওয়া হয়।
৪-মার্চ-২০২৩ কয়েক হাজার ডিভোর্সের আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়।
৬-মার্চ-২০২৩ পরবর্তি শিক্ষাবর্ষে শুধুমাত্র ছাত্রদের ভর্তি করা হয়।
১৩-মার্চ-২০২৩ পারওয়ানে কিছু বিউটি পার্লারের ব্যনারে থাকা নারীদের ছবি মুছে দেওয়া হয়।
১৫-মার্চ-২০২৩ তাকহারে রেস্টুরেন্ট মালিকদের মাহরাম ছাড়া নারীদের সার্ভ করতে নিষেধ করে দেওয়া হয়।
৫-মে-২০২৩ অল্পবয়স্ক ও অবিবাহিত মেয়েদের পাবলিক প্লেস ও গোরস্থানে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়
১১-মে-২০২৩ স্যানিটারি প্যাডসহ সবধরণের অশালীন বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা হয়
৮-জুন-২০২৩ বিদেশী এনজিওগুলোর শিক্ষা প্রদানকে নিষিদ্ধ করা হয়
১৭-জুন-২০২৩ রেডিও ও টিভি শোতে নারী ও পুরুষের অংশগ্রহণ আলাদা করা হয়
৬-জুলাই-২০২৩ সকল পাবলিক বিউটি পার্লার বন্ধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়
২৩ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত কালেক্ট করা ছিলো। তবে গত সপ্তাহে অন্যতম বড় এক ডিসিশন এসেছে। পশ্চিমা মিডিয়া প্রচার করছে, 'ব্যাভিচারি নারীদের পাথর ছুড়ে হত্যা ফিরিয়ে আনলো তালেবান'। আসল খবরটা হলো, শরীয়াহ'র দন্ডবিধি অনুযায়ী ব্যাভিচারের শাস্তি রজম ফিরিয়ে আনা হয়েছে, যা নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই।

Post a Comment

0 Comments