
এতো মানুষ মরে, তুই মরিস না কেন? বলেই আম্মু আমারে জড়াইয়া কানতে লাগলো।
এইবার আমার মন খারাপ হলো খুব। নিজের অপমান আমার আর গায়ে লাগে না আজকাল। তবে আমার জন্য আম্মুরে কথা শুনতে হলে, তখন আমার অসহ্য লাগে। মনে হয় এক ড্রাম কেরোসিন ঢেলে ঘর বাড়ি সব জ্বালিয়ে দিই।
মেজোফুপু এসে আমাকে সরিয়ে নিয়ে যায়। বাবা তখনও লাঠি হাতে চিৎকার করছে, এই বাড়িতে ওর ভাত বন্ধ। এরপর কেউ যদি ওরে এখানে খাইতে বা থাকতে দিসো, আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না।
ফুপুআম্মা আমার কাঁটা কপালে মলম লাগায়ে দেয়। জ্বলা উচিত, কিন্তু একটুও জ্বলে না। মাথায় হাত রেখে ফুপু বলে, টাকাগুলো নেওয়ার কী দরকার ছিলো? এতো কথা শুনিস। একটু ভালো হয়ে চলতে পারিস না....
ফুপুর কথা আমার কানে ঢোকে না। আমার খালি মনে পড়ে আম্মুর শেষ কথা, এতো লোক এতোভাবে মরে, তুই মরিস না কেন?
আমার চোখ লেগে আসে। ঘুমের মধ্যে বাবা আবার আমার দিকে তেড়ে আসে। আমি ভয় পেয়ে আম্মুরে জড়াইয়া ধরি, বাবার লাঠির আঘাত গিয়ে লাগে আম্মুর মাথায়। আমি চিৎকার করতে চাই। আমার মুখ দিয়ে আওয়াজ বের হয় না।
২.
দাদার মেট্রিকের রেজাল্ট এর দিন অনুষ্ঠান হবে জানতাম।
তবে সেই অনুষ্ঠান এতো বড় হবে, ভাবতে পারিনি।
রেজাল্ট শুনে বাবা সারা মহল্লায় মিষ্টির বন্যা বইয়ে দিয়েছিলো। আমি নিজেও রাশেদ আর মনিরকে দুইটা চমচম খাওয়াইছিলাম। টাকা ছিলো না যদিও, তবে রানা লোক ভালো। বাকি চাইলে না করে না।
সন্ধ্যায় বাসায় এসে দেখি বাসার সামনে ভীড়। ভিতরে ঢুকে দেখি লাল রঙের বিশাল এক অস্ট্রেলিয়ান গরু। পুরো গা চকচক করতেসে। তবে তারচেয়ে চকচক করতেসে বাবার চোখ। গর্বে, আনন্দে।
বাবা ঘোষণা দিলেন, আগামীকাল নামাজের পর গ্রামের সবার দাওয়াত। আমার মামুন বোর্ড স্ট্যান্ড করেছে। সামর্থ্য থাকলে সারা দেশ খাওয়াতাম। সামর্থ্য নাই, তাই গ্রাম খাওয়াচ্ছি।
আমার হাসি আসে। দাদার রেজাল্ট এর পর থেকে বাবার মন এতো ভালো। আমার সাথেও ভালো করেই কথা বলতেসে, মনে হইতেসে পৃথিবীর সবচে সুখী মানুষটা। রেজাল্ট নিয়ে বাবার এক ধরণের পাগলামি আছে। কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন কী না!!
অবশ্য ভালো আমারও কম লাগতেসে না, দাদা ভালো করবে, জানতাম। তাই বলে বোর্ডে ফার্স্ট হয়ে যাবে, এতোটাও ভাবি নি আমি।
নাহ, দাদা আসলেই খুব ভালো স্টুডেন্ট। খুব।
আমি রাশেদরে ফোন দিই। কাল সকালে ক্যারাম খেলার প্ল্যান বাতিল। এর বদলে তোদের সবার দাওয়াত আমাদের বাসায়।
ফোন রেখে আমি গরুর দেখতে যাই। ছোটবেলা থেকেই গরু দেখতে আমার খুব ভালো লাগে।
৩.
উৎসবের মধ্যে আমি সবসময়ই কুরবানি ঈদ কুরবানি ঈদ গন্ধ পাই।
সেমাই খেতে পছন্দ করি না আর পোশাক আশাকে আগ্রহ পাই না বলে ছোট ঈদ আমার ঈদ ঈদ লাগে না। ঈদ বলতে আমি বুঝি কুরবানি ঈদ।
বহুদিন পর বাসায় সেই কুরবানি ঈদ ফিরে এসেছে।
জয়নাল কাকা গরু জবাই দিয়েছে। নাজমুল মামা লুঙ্গি কাছা মেরে বসে মাংস কাটতেসে। আর আমি? আমি কিছু না করে মাংস ঘাটতেসি। ঠিক যেমন করে ঘাটতাম ছোট থাকতে।
মনে আছে, একবার মাংস কাটতে গিয়ে আমি আঙুল কেটে ফেললাম। ছোটবেলা থেকেই আমি একটু শক্ত প্রকৃতির ছেলে। বাবাকে গিয়ে বললাম, বাবা, রক্ত। বাবাকে আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন। আমি বারবার তার মাথায় হাত দিয়ে বলছিলাম, আমার লাগে নি বাবা, একটুও ব্যথা লাগেনি।
আমি আজ আবার হাতে রক্ত মাখাই। ইচ্ছে করে, দৌড়ে গিয়ে বাবাকে বলি, বাবা, রক্ত!!
এখন কি বাবা আবার আগের মতো কষ্ট পাবে? নাকি রাগ করে বলবে, ও হাত কেটেছে কেন? ওর ভাত তিনদিন বন্ধ।
নাজমুল মামা পেছন থেকে পিঠে কিল মারে, এই বদমাশ, বসে বসে মাংস ঘাটিস কেন?
আমি উঠে পড়ি।
৪.
শেষ আমাদের বাসায় খাওয়া হয়েছিলো আমার মুসলমানিতে। আমি তখন ক্লাস টুতে।
আবার আজ ১০ বছর পর এই বাড়িতে খাওয়া দাওয়ার আয়োজন হলো। পার্থক্য খালি একটাই। সেবার সবাই খাওয়ার আগে বা পরে আমাকে দেখতে আসতো। বলতো, তোমার মুসলমানি হইসে? আমার এতো লজ্জা লাগতো যে বলার না।
আর এবার সবাই খাওয়া দাওয়া শেষে খুজতেসে দাদাকে। দাদাকে জিজ্ঞেস করতেসে, তুমি স্ট্যান্ড করছো? দাদা লজ্জা লজ্জা হয়ে মাথা নাড়ায়। ঠিক আমার মতো।
তবে কি মুসলমানি আর বোর্ড স্ট্যান্ড দুইটাই লজ্জার ব্যাপার? কে জানে!!
আমি আনমনেই ফিক করে হেসে উঠি।
পোলাওয়ের গামলা হাতে আগাইতে থাকি। এমন সময় পাশ থেকে একজন বলে, মেট্রিকে ভালো করছে বলেই এমন মাথায় তুলতেসে? ইন্টারে তো বখাটে হয়ে যাবে!
আমার মাথায় রক্ত উঠে যায়।
আমি কলার ধরে ফেলি। অল্প সময়ের মধ্যে হইহই রইরই লেগে যায়। বাবা এসে আমারে জুতো দিয়ে মারতে শুরু করেন। রাশেদ আর মনির আগাইতে আসলে ওদেরও মারেন। লজ্জায়, অপমানে আমার মাথা হেঁট হয়ে যায়।
দাদা বলে, তুই এতো নীচ সাদিক? বড় ভাইয়ের ভালো রেজাল্ট ও সহ্য করতে পারিস না?
বাবা বলে, কেয়ামতের দিন আমি আল্লাহ রে জিগাবো। এতো ঘর থাকতে এই জঞ্জালকে আমার ঘরেই কেন দিলো?
আমি রাশেদ আর মনিরকে নিয়ে বের হয়ে যাই। বলি খিদা পেয়েছে তোদের?
দুইজনই আস্তে করে বলে, না।
৫.
অনেক ছেলে মেয়ে ইন্টারে উঠে বখাটে হয়ে গেলেও, দাদা বখে যায়নি।
বরং দাদা ইন্টারে আরো বেশি মার্কস নিয়ে বোর্ড স্ট্যান্ড করলো। বাবা বললো, এইবার পুরো ওয়ার্ড নিয়ে উৎসব হবে। বুয়েটের রেজাল্টটা দিক।
তবে দাদার মনে বুয়েট ছিলো না।
বরং হুট করেই আমরা দাদার জার্মান ভিসা আসতে দেখলাম। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে দাদা জার্মানি চলে গেল। দাদার বিদায়ের দিন সবার সাথে আমিও এয়ারপোর্ট ছিলাম। বাবা কানতে কানতে বলেছিলো, আমার সাতকপালের ভাগ্য তোর বাবা হতে পেরেছি আমি। ভালো থাকিস তুই বাপ।
আম্মু, বুবু সবাই যখন চোখ মুছতেছে, আমি তখন সাবধানে চোখ অন্যদিকে ঘুরাইয়া নিই। দাদার সাথে আমার স্মৃতি খুব বেশি না। তবুও কেন জানি মনে হচ্ছে, কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে আমার।
দাদা এসে হাসতে হাসতে বলে, কি রে, জার্মানি যেতে পারলি না বলে মন খারাপ? আমার মতো পড়াশোনা কর। ঠিকই যাইতে পারবি।
আমার চোখের জল উধাও হলো। চোখের জল খুব দামি জিনিস। যার তার জন্য ফেলে নষ্ট করতে নাই।
৬.
বুবুর বিয়ের দিন আমি আবার মার খেলাম।
বুবুর চেইন চুরি হলো সকালে। আর বাবা আমাকে জুতা পিটা করলো দুপুরে। ক্লাস টেনের পর থেকেই আমার হাত খরচ বন্ধ। কাজেই, বাবার পকেট বা বুবুর ব্যাগ থেকে টাকা টান আমাকে মারতেই হতো। তাই বলে নিজের বোনের বিয়েতে আমি চেইন চুরি করবো?
মারধোর শেষে বাবা ঘোষণা করলেন, আজ থেকে তুই আমার ছেলে না। আমার জীবনের একমাত্র অভিশাপ তুই।
বাড়ি থেকে বের হয়ে আসার আগে স্বপন কাকার দোকান থেকে লোক আসলো। বুবুর চেন দোকানেই ফেলে এসেছিলো বাবা।
৭.
তবুও আমি বাড়ি ফিরেছিলাম।
রাগ হয়নি তা না, তবে বাবারই বা দোষ দেই কী করে? দাদা এতো ভালো স্টুডেন্ট, বুবুও ভালো ছাত্রী ছোটবেলা থেকেই। খালি আমিই একমাত্র লাড্ডুগুড্ডু। বাবার একটা মান সম্মান আছে না?
দোষ আমারও খুব ছিলো, তাও না। সায়েন্স আমার ভালো লাগতো না, এইটা আমার দোষ? ফলাফল যা হওয়ার তাই, ইন্টারে ফেইল করে বসলাম।
এরপর থেকে বাবা আমার সাথে আর কখনওই কথা বলেনি।
বুবুর বিয়ের রাতে নাজমুল মামা তড়িঘড়ি করে বললো, সাদিক,দ্রুত আয়। ছবি তুলতেসে তো। আমি একটা শার্ট পরে দৌড় মারি। কাছাকাছি যেতেই বাবাকে বলতে শুনলাম, দ্রুত ছবি তোলো। ওর জন্য অপেক্ষা করার দরকার নাই। শুধু বংশের না, ছবিরও তো একটা মান ইজ্জত আছে, নাকি?
আমি আর অপেক্ষা না করে পেছনের গেট দিয়ে বের হয়ে গেলাম।
বাইরে অমাবস্যা। কোথাও কোন আলো নেই। ঐ রাতে হিমু হতে আমার খুব ইচ্ছা হয়েছিলো। খুব।
৮.
আম্মু মারা গেলো ঝুম বৃষ্টির এক রাতে।
সকালে মানুষের চিল্লাচিল্লিতে ঘুম ভাঙলো। উঠে শুনি আম্মু নাই। ঘুমের মধ্যে চলে গেছে।
এক ঝটকায় মনে হলো স্বপ্ন দেখছি। আবার আরেক ঝটকায় মনে হলো বাস্তব। যেন এক আলো আধারের মাঝে আমি আটকা পড়েছি। ওপাশে আম্মু। এপাশে আমি।
জীবনের প্রথম জানাজা পড়ানোর সময় মনে হয়েছিলো, বাবা জুতা দিয়ে মারবে আবার। বলবে, তোর জন্যই তোর মা মরেছে।
বাট বাবা কিছু বললো না। কাঁদতে কাঁদতে বললো, পড়াক। ওরে ওর মা খুব ভালোবাসতো।
আমি দাঁতের সাথে দাঁত চেপে ধরি। এই পৃথিবীতে এই একটা মানুষের কাছেই আমার মূল্য ছিলো। রাত জেগে বসে থাকতো খাবার টেবিলে। বাবার পকেট থেকে পঞ্চাশ টাকা একশো টাকা বের করে দিতো। আমি ঘুমিয়ে গেলে হাত বুলিয়ে দিতো মাথায়।
আমি ডুকরে কেঁদে উঠি। মা ছাড়া পৃথিবীর বুকে সব সন্তানই কি জঞ্জাল হয়ে যায়?
৯.
বাবার অহংকার ছিলো দুইটা।
বড়দাদার লেখাপড়া।
আর বাবার স্বাস্থ্য।
আমার দাদা, পরদাদা দুজনেই একশোর উপর হায়াত পেয়েছিলেন। কাজেই, বাবা বলতেন, এতো সহজে আমি যাচ্ছি না। আমার শক্তি দেখেছ তোমরা?
আম্মুর মৃত্যুর পর আমার সেই শক্তির বাবা খুড়িয়ে হাঁটতে শুরু করলেন।
আরো এক বর্ষার রাতে বাবা স্ট্রোক করে প্যারালাইজ হয়ে গেলেন। ডাক্তার বললেন, স্যারকে একটু বাইরে নিয়ে যাও।
আমি জমি বিক্রির বন্দোবস্ত শুরু করলাম। এবং জমির কাগজ নিতে গিয়েই আমি খেলাম আরো একটা ধাক্কা। আম্মু কেন আমার মাথায় হাত রেখে কাঁদতো, আমি বুঝে গেলাম।
আমাদের সমস্ত ভালো জমি বাবা লিখে দিয়েছেন দাদা আর বুবুর নামে। আমার ভাগে পড়েছে দুইটা ডোবা, তিনটা টিনশেড বাড়ি আর কিছু ধানি জমি।
এরমধ্যে বাবার কথা বন্ধ হয়ে গেল । আমি বাবাকে খাইয়ে দিই। বাবা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকাইয়া থাকেন। চোখ দিয়ে পানি পড়ে। আমি বাবাকে অভয় দিই, দাদা চলে আসবে বাবা, চিন্তা করো না।
কিন্তু দাদা এলো না।
এবং সে তার নিজের নামের কোন জমি বিক্রি করতে রাজি হলো না।
বরং ফোনে বললো, তুই আগে থেকেই ছোটলোক সাদিক। আমার ভালো দেখতে পারিস না। এখন জমি হাতানোর তালে আছিস? ওসব হবে না। সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে দে। এই অবস্থায় বাইরে এনে লাভ কী?
আমি ফোন রেখে দিই। দাদা বরাবরই গণিতে ভাল ছিলো।
বাট বুবু গণিতে এতো ভালো হলো কবে? নির্ঘাত দাদা শিখিয়ে দিয়েছে। কারণ, এতো বড়লোক জামাই থেকেও সে নিজের জমি বাবার জন্য বিক্রি করতে রাজি হলো না। হাসপাতালে ভর্তি করতে বললো।
হাসপাতাল?
অথচ বাবা আমাদের তিন ভাই বোনকে কোনদিন হাসপাতাল চেনাননি। আমাদের বাসাতে ডাক্তার আসতো সবসময়ই। খান বাড়ির লোকজন কখনও ডাক্তারের কাছে যায়নি।
সেই বাবাকে আমি ডাক্তার চেনাবো?
১০.
টাকার ব্যবস্থা শেষ পর্যন্ত আমি করেছিলাম। তবে আমি অযোগ্য ছেলে তো, বাবা বোধহয় আমার টাকায় চিকিৎসা করাবেন না বলে মনস্থির করেছিলেন।
ইন্টার ফেল ছেলে, ডাক্তারের কাছে পরিচয় দিতেও হয়তো লজ্জাই লাগতো!!
এই ভয় থেকেই কি না, সারাদিন ভালো থাকা মানুষটা রাতের বেলা অস্থির হয়ে গেলেন।
রতন কাকা গামছা নিয়ে দাড়িয়ে আছেন। মরিয়মের মা বাবার কপাল মুছে দিচ্ছে বারবার। বাবা আমাকে ডেকে কী যেন বলার চেষ্টা করছেন, পারছেন না।
বাবার কি আম্মুর কথা মনে পড়সে? বুবুর কথা? নাকি দাদার কথা? আমি বুবুর বিয়ের দিনের সেই ছবিটা বাবার হাতে দিই। বাবা ছবি ছুড়ে ফেলেন।
আমার মুখ দু হাতে ধরে আমার কপালে একটা চুমু খান।
হুট করে বাবা কথা ফিরে পান। ফিসফিস করে বলেন, এতো ঘর থাকতে আল্লাহ তোরে আমার ঘরেই কেন পাঠাইছে, আমি বুঝছি। আমারে তুই মাফ করে দে?বাবা হাউমাউ করে কাঁদেন। আমার কষ্ট হয়।
সেই কলিজা ছিড়ে যাওয়া কষ্ট।
আমি বাবাকে শক্ত করে ধরি। বাবা আমাকে আরো শক্ত করে ধরে। সেই হাত আরো শক্ত হয়ে আসে, আমি ডাকি, বাবা, বাবা!!
বাবা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। বাবার চোখে জল।অপরাধের জল। আফসোসের জল।
বাবার সেই তাকানো দেখে আমি চমকে উঠি।
আম্মু ছাড়া আর কেউ কোনদিন এতো ভালোবাসা নিয়ে আমার দিকে তাকায়নি!!
#SehriTales_Day_29
#Sadiqur_Rahman_Khan
#Ramadan_2024
0 Comments