"লেবাস"


আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে এক দাঁড়িওয়ালা ভাই থাকতেন। রুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছেন। একেবারে জোব্বা পরা হুজুর। 

আপু ছিলেন ডাক্তার। দুইজন সকালে বের হয়ে চলে যেতেন। আসতেন সন্ধ্যায়। 

সেই আপু একদিন আম্মুকে তাদের বৈবাহিক জীবন সমন্ধে বলতে গিয়ে বলেছিলেন, উনার হাজব্যান্ড জোরে কথা কেমনে বলতে হয়, জানে না। আজ ৫ ধরে সংসার করছি, পড়াশোনা শেষে চাকরি করেছি, বাঁধা পাইনি বরং সাপোর্ট ই পেয়েছি। 

এক ভাইয়ার কাছে পড়েছিলাম কিছুদিন। রাবির আরবি বা ইসলামিক হিস্ট্রিতে পড়াশোনা করতেন। পাগড়ি পরে, চোখে সুরমা দিয়ে আসতেন। বড় বড় দাঁড়ি। 

উনার সাথে আমার সব রকমের কথাই হতো। প্রেম,ভালোবাসার থিঙ্কিং, বা পার্টনার ব্যাপারে উনার থট আমার কাছে গড়পড়তা মানুষের চেয়ে বেশিই রোমান্টিক মনে হয়েছে। 

২০২৩ এ ভাইয়ের সাথে আবার দেখা হয়েছিলো। রাজশাহী পলেটেকনিক কলেজের সামনে বাচ্চা ধরে বসে ছিলেন।ভেতরে ভাবী কোন একটা চাকরির পরীক্ষা দিচ্ছিলেন।

দেখা হতেই বললেন, দোয়া করিস। বাচ্চা সামলিয়ে অনেক কষ্ট করে প্রিপারেশন নিয়েছে। যেন আল্লাহ তাআলা সফল করেন। 

এক হুজুরের কাছে আরবি পড়তাম। সদ্য বিয়ে করেছেন, মুখে হাসি লেগেই থাকে। একদিন আম্মু কেক দিলো খাইতে, হুজুর টিস্যুতে জড়ে নিলেন কেকটা। বললেন, তোমার ভাবী কেক খাইতে পছন্দ করে। আমি একদমই খাই না। 

তো, হুজুর বা দাঁড়িওয়ালা মানেই মিসোজিনিস্ট, এরা বৌকে ভালোবাসে না, চাকরি করতে দেয় না, সাপোর্ট করে না, শেকলে বন্দি করে রাখে বলে যে প্রচারটা আছে, এইটা খুবই ফালতু একটা আলাপ। 

বরং এখন পর্যন্ত আমাদের আশেপাশে দুইটা বৌ পেটানো এক্সট্রিম কেস দেখেছি আমি। মারধোরের শব্দ পাওয়া যাইতো, পরদিন আন্টির চোখ মুখে দাগ দেখতাম। এই দুই পুরুষ ই ছিলো বিরাট বড় শিক্ষিত, সভ্য। এর মধ্যে একজন আবার ছিলো সাংবাদিক। সকাল বিকাল নারীর উন্নয়নের কথা লিখে এসে রাতে বৌ পেটাতো। 

তারমানে কি সব শিক্ষিত মানুষ বৌ পেটায় আর সব হুজুররা রোমান্টিক? না। একেবারেই না। 

আমি বলতে চাইতেসি, মানুষের লেবাস দেখে, পোশাক দেখে, আদর্শ দেখে তাদের জাজ করাটা অন্যায়। 

এখানে খুব হাইলি এডুকেটেড স্বামী যখন তার বৌ এর চোখ তুলে ফেলে, তখন রানা প্লাজার দুর্ঘটনায় দুই পা হারানো সাধারণ একজন শ্রমিক শক্ত করে পঙ্গু বৌ এর হাত ধরে রেখে বলে, আমি ছাড়া ওর আর কে আছে?


Post a Comment

0 Comments