"কর্পোরেট ব্যাবসা"

মিশরে প্রাচীন কালে পাতলা কোমরের মেয়ের খুব কদর ছিল। যে মেয়ে যত স্লিম, তাকে তত আকর্ষণীয় ধরা হতো।
কিন্তু এসব পাতলা কোমরের মেয়েরা যখন বিয়ে করতো, তখন তারা বেছে বেছে মোটা ভুঁড়িওয়ালাদেরই বিয়ে করতো।
কারণ সেসময়ে ভাবা হতো, ধনীরা গরীবদের চেয়ে ভাল মন্দ খায়। তাই মোটা লোকেরা আর্থিকভাবে সচ্ছল ও ধনবান হয়।
তখন দেখা যেতো, অনেক পুরুষই কৃত্রিমভাবে মোটা হওয়ার চেষ্টা করত। আবার মাথায় টাকওয়ালা পুরুষদের ভাবা হতো মহাজ্ঞানী । তাদেরও বেশ কদর ছিল।
মধ্যযুগে এসে মোটা মেয়েদের কদর খুব বেড়ে যায়। কারণ তাদের ধনী-অভিজাত পরিবারের ভাবা হতো। কারণ, একগাদা দাসী থাকার কারণে তাদের কোন কাজই করতে হতো না। ফলে কাজ না করার জন্য মোটা হয়ে যেতো, সেটাই ছিল আভিজাত্যের প্রতীক।

আসলে সৌন্দর্যের সংজ্ঞা যুগ ভেদে একেক রকম।
আজ সারা বিশ্বে প্রচার করা হচ্ছে মেয়েদের জন্য ফর্সা মানেই সুন্দর, জিরো ফিগার মানেই আকর্ষণীয়। এই জন্য দু'বেলা হাফ প্লেট ভাত খেয়ে দুর্বল শরীর নিয়ে হলেও ফিগার জিরো মেইনটেইন করায় ব্যস্ত সবাই।
অথচ আগের যুগে জিরো ফিগারের মেয়ে দেখলে লোকে নির্ঘাত ভাবতো, মেয়েটা নিশ্চয় কাঙ্গাল পরিবারের। না খেতে পেয়ে এমন শুকিয়ে গেছে।
এগুলো আসলে কিছুই না। সবই কর্পোরেট ব্যবসা। মোটা বা চিকন, কালো বা ফর্সা- কোনটা ফ্যাশন এটা নির্ধারণ করে কর্পোরেট ব্যবসায়ীরা। তারাই তাদের প্রয়োজনে বিভিন্ন সময়ে সৌন্দর্যের বিভিন্ন সংজ্ঞা দেয়, আর আমরা সেই অনুযায়ী সুন্দর হওয়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ি।
ফোর্বস ম্যগাজিনের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে প্রতিবছর কসমেটিক ব্যবসা হয় প্রায় ২৭০ বিলিয়ন ডলার।

সৌন্দর্যের বিষয় নিয়ে মাথা ঘামায় দুধরনের মানুষেরা। 
এক:- কর্পোরেট ব্যবসায়ীরা, ব্যবসায়িক স্বার্থে।
দুই:- যাদের নিজস্ব কোন যোগ্যতা নেই, তাই সৌন্দর্যকেই এরা যোগ্যতা মনে করে।

তবে, আমার কাছে সৌন্দর্যের সংজ্ঞা হচ্ছে লয়ালিটি, ব্যক্তিত্ব, মনুষ্যত্ব, সামগ্রিক স্বার্থচিন্তা মানুষের আসল সৌন্দর্য। জীবনের একটা পর্যায়ে এসে রূপ-যৌবন ফুরিয়ে যাবে, আজ মারা গেলে কালই এতো যত্নে রাখা দেহ পচেগলে পোকার খাবার হবে। কিন্তু একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব, মনুষ্যত্ব, আচারব্যবহার, মনমানসিকতা কেয়ামত পর্যন্ত টিকে থাকবে।আপনি অন্যের প্রতি কতটা আন্তরিক, ব্যক্তিস্বার্থের আগে আপনি কতটা সামগ্রিক স্বার্থ চিন্তা করতে পারেন, আপনি মানুষের সাথে কতটা লয়াল, কাইন্ডহার্টেড এগুলোই আপনার প্রকৃত সৌন্দর্য, যার কোনো বিনাশ নেই!



Post a Comment

0 Comments