"প্র্যাকটিসিং পরিবার"

একটা মোটামুটি প্র্যাকটিসিং পরিবার ছিলো। ছেলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো, ঘরের মহিলারা হিজাব-নিকাব পরতো। সেই ছেলের বিয়ে ঠিক হয়েছে, দাওয়াত পেলাম।

আমাকে বলা হয়েছিলো, বিয়ে তো শুক্রবারে। আগের দিন ছেলেরা ছেলেরা একটু মজা করবে, রাতে খাবারের ব্যবস্থা আছে যেন অবশ্যই অবশ্যই থাকি। ছেলেটাকে মোটামুটি প্র্যাকটিসিং দেখায় ভাবিনি এটা “গায়ে হলুদ” টাইপের কোনো অনুষ্ঠান হবে। একটা কমিউনিটি সেন্টারেই আয়োজন হয়েছিল, উপরে উঠে গেট দিয়ে ঢুকেই শুনতে পেলাম উচ্চ আওয়াজে গান বাজছে, তাকিয়ে দেখলাম চারপাশে বেপর্দা নারী। স্টেজের দিকে তাকিয়ে দেখলাম পাত্র-পাত্রী পাশাপাশি বসে আছে।
‌‌
আশ্চর্য বিষয়! একটা বিয়েকে কেন্দ্র করে গোটা পরিবারের দ্বীন নিমিষেই হারিয়ে গেল?
অস্থিরতা কাজ করছিলো এসব ভেবে। একটা মুহূর্তও থাকতে পারব বলে মনে হচ্ছিলো না। বের হয়ে যাচ্ছি ঠিক এমন সময়ে একজন এসে বললো গায়ের পাঞ্জাবিটা পরিবর্তন করে তাদের দেয়া পাঞ্জাবি পরতে। এক প্রকার টেনে নিয়ে যাচ্ছে ভেতরের দিকে, আমি তখন বললাম একটু কাজ আছে, এখন না সম্ভব হলে পরে আসব। রীতিমতো জোরাজুরি করে বেরিয়ে আসলাম।
অন্তত এমন জায়গায় আমার পক্ষে থাকা সম্ভব হচ্ছিলো না যেই জায়গা থেকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কানে আঙুল চেপে দ্রুত প্রস্থান করতেন। এমন জায়গাকে খুব ভয় পাচ্ছিলাম যেখানে ক্রমাগত ফি-ত-না বর্ষিত হচ্ছে। সম্পর্ক রক্ষার্থে কিংবা সমাজে চলার স্বার্থে সেখানে থাকা আমার পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব না।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে অনলাইনের অনেক দ্বীনি ভাই আছেন যাদের কাছে বিয়ে করাটাই জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য। বিয়ের প্রসেসটা কেমন হবে সেটা ঠিক করে দেয়ার মতো ব্যক্তিত্ব তাদের নেই, বিয়ের আয়োজনে উভয় পরিবারের সম্মতিতে স্ত্রীকে বেপর্দা করতে হলে তারা ভাববে একটা দিনেরই ব্যাপার! পরে তো পর্দা করবে।

অথচ এখান থেকেই হার মানা শুরু হয়। পরবর্তীতে স্ত্রীকে পর্দার পরিবেশ করে দিতে পারে না, পর্দানশীন মেয়ে হলেও সামাজিকতা, পারিবারিক রীতি-নীতির খাতিরে স্ত্রীকে বেপর্দা করে দেয়। এরকম ভাইদের দৃঢ় ব্যক্তিত্ব তৈরি করা সবার আগে ফরজ। বিয়ের পর স্ত্রীকে পর্দার পরিবেশ ঠিকমতো না দিতে পারলে বিয়ে আপনার জন্য না।
বিয়েকে ইবাদত হিসেবে যদি নিয়ে থাকেন তবে কেন বিয়েতে আল্লাহর অবাধ্যতার সমস্ত উপকরণ একত্র করেন? কেন সমাজ, লোকলজ্জার কথা ভেবে নিজের স্ত্রীর পর্দা বিনষ্ট করেন? এখন থেকেই শপথ নিন, দৃঢ় মনোবল রাখুন এই ব্যাপারে যে, আপনার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় মুহূর্তটাতে সমাজ, বন্ধুবান্ধব, পরিবারের কথা ভেবে কোনো অনৈসলামিক রীতি-নীতি পালন করবেন না, নিজের স্ত্রীকে একটা সেকেন্ডের জন্যও বেপর্দা করবেন না।
~ Mayraj Hossain


Post a Comment

0 Comments