"তব তবি তব তব, তব তবা লী"— এটি ইমাম আসমায়ী রহ. -এর একটি বিখ্যাত কবিতার অংশ। কবিতার মূল নাম "সওতু সফীরিল বুলবুলি" । এই কবিতার পেছনে বিরাট এক কাহিনী আছে, হয়ত অনেকেরই তা অজানা! ঘটনাটি হলো—
আব্বাসীয় খলিফা আবু জাফর আল মানসুর ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ও বুদ্ধিমান শাসক। তবে তিনি কবিদের যথাযথ পুরস্কার না দেওয়ার জন্য এক ধরনের কৌশল অবলম্বন করতেন।
খলিফার অসাধারণ স্মরণশক্তি ছিল— তিনি কোনো কবিতা একবার শুনলেই মুখস্থ করে ফেলতেন! শুধু তাই নয়, তার একজন গোলাম দুইবার শুনলেই মুখস্থ করতে পারতো, আর একজন দাসী তিনবার শুনলেই কবিতাটি মনে রাখতে পারতো।
কোনো কবি যদি নতুন কবিতা নিয়ে আসতো, খলিফা একবার শুনেই তা মুখস্থ করে বলতেন—"এ তো আমি আগেও শুনেছি! এটা নতুন কিছু নয়, তাই তুমি পুরস্কার পাবে না।"
এরপর খলিফা পুনরায় আবৃত্তি করাতেন, তখন তার গোলামও মুখস্থ করে ফেলতো। এরপর দাসীকেও শোনানো হতো, ফলে সেও মুখস্থ করে নিতো। এভাবে তিনজনই কবিতাটি জানার কারণে কবির আর পুরস্কার পাওয়ার উপায় থাকতো না!
একদিন খলিফা ঘোষণা করলেন—"যে ব্যক্তি এমন কবিতা শুনাবে, যা আমি আগে কখনো শুনিনি (অর্থাৎ, মুখস্থ করতে পারবো না), তবে কবিতাটি যে পাত্রে লেখা থাকবে, তার ওজন পরিমাণ স্বর্ণমুদ্রা তাকে দেওয়া হবে।"
বিখ্যাত কবি ইমাম আসমায়ী রহ. বুঝতে পারলেন, এতে নিশ্চয়ই কোনো ধোঁকাবাজি আছে। তাই তিনি খুব কঠিন ভাষায়, জটিল ছন্দে এক দুর্বোধ্য কবিতা রচনা করলেন— তব তবি তব, তব তবা লী (সওতু সফীরিল বুলবুলি)।
তারপর বেদুইনের বেশ ধারণ করে খলিফার দরবারে উপস্থিত হলেন এবং কবিতাটি আবৃত্তি করলেন।
কিন্তু এবার খলিফা হতভম্ব হয়ে গেলেন! তিনি কোনোভাবেই কবিতাটি মুখস্থ করতে পারলেন না।
খলিফা হতাশ হয়ে কবিকে বললেন,"আচ্ছা, তোমার কবিতাটি যে পাত্রে লেখা, সেটার ওজন অনুসারে তোমাকে স্বর্ণমুদ্রা দেওয়া হবে।"
কবি তখন হেসে বললেন—"আমি কাগজে নয়, বিশাল একটি পাথরে খোদাই করে লিখেছি, যা দশজন সৈন্য বহন করে এনেছে!"
এবার খলিফার আর কোনো উপায় রইলো না। তিনি বাধ্য হয়ে সেই পাথরের সমপরিমাণ স্বর্ণমুদ্রা কবিকে দিলেন।
এ পর্যায়ে খলিফার একজন মন্ত্রী বলে উঠলেন—"এই কবি নিশ্চয়ই ইমাম আসমায়ী রহ.!"
খলিফা তখন জিজ্ঞেস করলেন—"তুমি কি সত্যিই ইমাম আসমায়ী? তুমি তো আমাকে ধোঁকা দিয়েছো! আমার স্বর্ণ ফেরত দাও।"
ইমাম আসমায়ী রহ. বললেন—"আমি স্বর্ণ ফেরত দেব, যদি আপনি আমার একটি শর্ত মেনে নেন। শর্ত হলো, ভবিষ্যতে যত কবি আপনার দরবারে আসবে, তাদের ন্যায্য পুরস্কার প্রদান করবেন।"
অবশেষে খলিফা রাজি হলেন এবং এরপর থেকে কবিদের তাদের যথাযথ সম্মান ও পুরস্কার দেওয়া শুরু করলেন।
—(ঘটনাটি নেওয়া হয়েছে, সালমা মুহসিনাত নামক বোনের প্রোফাইল থেকে। আমি একটু গুছিয়ে পোস্ট করলাম।)
0 Comments