জীবন বড়ই বিচিত্র!
আজকে আমার কর্মস্থলের মার্কেটে দুর্গা পূজা উপলক্ষ্যে বেশিরভাগ অফিসই বন্ধ ছিলো, আমার কর্মস্থল ও আশেপাশের কিছু দোকানপাট খোলা ছিলো। তো আমাদের মার্কেটে যেই গার্ডগুলো থাকেন, তার মধ্যে একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী হওয়াতে আজকে ছুটিতে ছিলেন, আরেকজন ছিলেন অসুস্থ আর আরেকজনের ডিউটি রাতে। তো সিকিউরিটি গার্ড অফিস থেকে অন্য একজনকে মার্কেট দেখভাল করতে পাঠানো হয়। উনার বয়সের কথা যদি বলি আনুমানিক হবে ৬০+। তো বিকেল ৫:৩০ নাগাদ হবে হয়তো,উনি মার্কেটের কাঁচিগেট এ তালা লাগিয়ে পাঁচ মিনিটের জন্য চা খেতে যাচ্ছেন এই কথাটা একজনকে বলে চলে যান। উনার যাওয়া প্রায় দেড় ঘণ্টা এর কাছাকাছি হলেও উনার আসার আর কোনো লক্ষণ দেখা যায়না। এইদিকে আমাদের মার্কেটের বাইরে থেকে কেউ ভেতরে আর ভেতরে যারা ছিলেন উনারাও বাইরে আসতে পারছেন না। (উনি ১ দিনের জন্য এসেছেন ডিউটিতে,আবার নতুন একজন মুখ, বিধায় উনার ফোন নম্বর নেয়ার কোনো প্রয়োজন আছে বলে কারো মনে হয়নি।)
অবশেষে, কোনো উপায় না পেয়ে সিকিউরিটি গার্ড কোম্পানির ইনচার্জকে ফোন দেয়া হয়, উনি গার্ডের খোঁজ নিচ্ছেন বলে আশ্বস্ত করেন। উনি ফোনে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, উনি নাকি রাস্তা হারিয়ে ফেলেছেন, মার্কেট থেকে উনি এখন অনেক দূরে এবং সেখানে নাকি টেনশনে মাথা ঘুরে রাস্তায় পড়েও গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে আশেপাশের দোকানদাররা উনার জ্ঞান ফেরান এবং একটি দোকানে বসিয়ে রাখেন। তাই ইনচার্জ নিজেই উনাকে খুঁজে নিয়ে আসতে বের হচ্ছেন বলেন।
অবশেষে,সিকিউরিটি ইনচার্জ উনাকে খুঁজে আমাদের মার্কেটে নিয়ে আসেন, যারা ভেতরে আটকা পড়ে ছিলেন উনারা বাইরে বের হয়ে রেগে ইনচার্জকে বলেই ফেললেন, এই বয়স্ক মানুষকে দিয়ে কি গার্ড এর কাজ হয়? উনাকে চাকরি থেকে বাদ দিয়ে দেন। কতক্ষণ ধরে আমাদেরকে এইখানে আটকে রেখেছেন। উনার জন্য আমাদের কতো হয়রানি হতে হয়েছে।
এই কথা শুনে উনি কাঁদতে শুরু করেন এই বলে যে, না! না! আমাকে চাকরি থেকে বাদ দিয়েন না স্যার।
ইনচার্জও সাথে সাথে বলে ফেলেন,
না! না! চাচা, আপনাকে বাদ দিবো না আমরা আপনি টেনশন করেন না। আপনাকে আর দূরে কোথাও দিবো না, আমাদের অফিসের কাছেই আপনাকে কোথাও ডিউটিতে দিবোনি ।
পরবর্তীতে ইনচার্জ আমাদেরকে জানান,
ঐ চাচার বাসা চাঁপাইনবাবগঞ্জ, উনার নাকি দুই ছেলে আছে। দুই ছেলেই পড়াশোনা করেন, দুইজনেরই কাজ করে সংসার চালানোর যথেষ্ট বয়স হয়েছে তবুও উনারা উনাদের বাবাকে এই বয়সে কাজ করতে পাঠান। উনার, যেহেতু যথেষ্ট বয়স হয়েছে, অনেক কিছুই এখন স্মরণে থাকে না,প্রায়ই ভুলে যান। আমাদের মার্কেটের সামনে দিয়েও নাকি ২/৩ বার ঘুরে উনি গেছেন কিন্তু চিনতে পারেন নি। যাইহোক, বয়স হচ্ছে, ভুল তো হবেই,তো সিকিউরিটি গার্ড অফিসে উনার ছেলেদেরকে ডেকে বাবার এই শারীরিক অবস্থার কথা বলে চাকরি থেকে অবসর নিতে বললে নাকি উনার দুই ছেলেই উনাকে বাসায় নিয়ে গিয়ে মারধর করেন,ঠিকমতো খেতেও দেন না সবসময়। মাঝে মধ্যে সিকিউরিটি অফিস থেকে মায়া করে উনাকে খেতে দেন ম্যানেজার। তাই উনি চান না এই চাকরি ছেড়ে দিতে, ছেড়ে দিলেই ছেলে নামের সেই পিশাচগুলোর কাছে মার খাওয়া লাগবে।
উনার শেষ কথাগুলো এখনো কানে ভাসছে,
আল্লাহ্ আমার মরণও দেয়না...

0 Comments