আমার বড় মেয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করল-
"আমি কেন কাজ করতে পারব না? (অথবা নারীরা কেন কাজ করতে পারবে না)। খাদিজা (রাঃ) তো কাজ করেছেন!"
প্রশ্নের উত্তর আমি এভাবে দিয়েছি তাকে-
প্রথমে তাকে জানালাম, প্রয়োজন থাকলে নারীদের কাজ করা নিষিদ্ব নয়।
তারপর তাকে বললাম মুসহাফ খুলে মুসা (আ) এর সাথে মাদায়েন শহরে দুই নারীর সাক্ষাতের অংশটুকু পড়ে যেতে। সে পড়ে গেল এবং আমি ব্যাখ্যা যুক্ত করলামঃ
১। 'যখন সে মাদ্য়্যানের কূপের নিকট পৌঁছল, দেখল একদল লোক তাদের পশুগুলিকে পানি পান করাচ্ছে এবং তাদের পশ্চাতে দু’জন রমণী তাদের পশুগুলিকে আগলে আছে। মূসা (আ) বলল, ‘তোমাদের কি ব্যাপার?’ ওরা বলল, ‘রাখালেরা ওদের পশুগুলিকে নিয়ে সরে না গেলে আমরা আমাদের পশুগুলিকে পানি পান করাতে পারি না। আর আমাদের পিতা অতি বৃদ্ধ মানুষ।’
[সুরা আল ক্কাসাস-২৩]
- নারীরা পুরুষদের থেকে দুরে অবস্থান করছিলেন যতক্ষন না তারা প্রস্থান করছে। অতএব ফ্রিমিক্সিং পরিবেশে নারীদের জন্য কাজ করা বৈধ নয়।
- মুসা(আঃ) তাদের সাথে কথা বলেছেন এবং তারাও জবাব দিয়েছেন। বিপরীত লিঙ্গের সাথে বিধিসন্মত প্রয়োজনীয় কথা বলা বৈধ।
- তাদের বাবা ছিলেন বৃদ্ব তাই তাদের বের হতে হয়েছে। পুরুষরাই নারীদের দেখাশোনা করবে, এটাই মৌলিক বিধান। নারীদের অর্থনৈতিক দায়িত্ব থাকবে স্বামী, বাবা, সন্তান অথবা মুসলিম কমিউনিটির কাছে।
২। মূসা (আ) তখন ওদের পশুগুলিকে পানি পান করাল। তারপর সে ছায়ার নীচে আশ্রয় গ্রহণ করে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমার প্রতি যে কল্যাণ অবতীর্ণ করবে, নিশ্চয় আমি তার মুখাপেক্ষী।
[সুরা আল ক্কাসাস- ২৪]
তাদেরকে সাহায্য করা নিজের দায়িত্ব মনে করলেন মুসা (আ)। সম্মানিত পুরুষরা নারীদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন একেবারে অপরিচিত হলেও।
৩। 'অতঃপর নারীদ্বয়ের একজন লাজুকভাবে হেঁটে তার কাছে এসে বলল ‘আপনি যে আমাদের পশুগুলিকে পানি পান করিয়েছেন, তার পারিশ্রমিক দেওয়ার জন্য আমার পিতা আপনাকে ডাকছেন। অতঃপর মূসা (আ) তার নিকট এসে সমস্ত বৃত্তান্ত বর্ণনা করলে সে বলল, ‘ভয় করো না। তুমি যালিম সম্প্রদায়ের কবল হতে বেঁচে গেছ।’
[ সুরা আল ক্কাসাস- ২৫]
ওই নারী যখন মুসা (আঃ) এর কাছে এসে তার বাবার সাথে সাক্ষাতের অনুরোধ করল সে ছিল সলজ্জ। নির্লজ্জতা বা অসভ্যতা কখনোই ধর্মভীর নারীর সাথে যায় না।
৪। নারীদ্বয়ের একজন বলল, হে আমার পিতা! আপনি একে মজুর নিযুক্ত করুন, কারণ আপনার মজুর হিসেবে উত্তম হবে সে ব্যক্তি, যে শক্তিশালী, বিশ্বস্ত।
[ সুরা আল ক্কাসাসঃ ২৬]
তাদের মধ্য থেকে একজন যখন মুসা (আঃ)কে নিয়োগ করার কথা বললো, সে দুইটা বৈশিষ্ট উল্লেখ করলো-
ক.শক্তিশালী
খ. বিশ্বস্ত
এই গুন দুটি শুধুমাত্র কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে নয়, বিয়ের ক্ষেত্রেও কি দেখা জরুরী এই আয়াত আমাদের সামনে স্পষ্টভাবে বর্ণ্না করেছে। শক্তিসামর্থ ও বিশ্বস্ততা।
৫। 'তিনি মূসা (আ) কে বললেন, আমি আমার এ কন্যাদ্বয়ের একজনকে তোমার সাথে বিয়ে দিতে চাই, এ শর্তে যে, তুমি আট বছর আমার কাজ করবে, আর যদি তুমি দশ বছর পূর্ণ কর, সে তোমার ইচ্ছে। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না। আল্লাহ ইচ্ছে করলে তুমি আমাকে সদাচারী পাবে।'
[সুরা আল ক্কাসাস- ২৭]
- তাদের পিতা মুসা (আঃ) এর মাঝে সক্ষমতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা দেখে নিজের মেয়ের জন্য বিয়ের প্রস্তাব করেন। যোগ্যতাসম্পন্ন কাউকে মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার মধ্যে কোনো বাধা নাই।
- তিনি মাহর চাইলেন এবং নির্দিষ্ট পরিমান চাইলেন।
- মাহরটা ছিল বেশ ভারী । মুসা (আঃ) কে ৮ বছর কাজ করতে হয়েছিল মাহর পরিশোধ করার জন্য। এটাকে অস্বাভাবিক হিশাবে দেখা হয় নি।
-
অতঃপর আমরা আমাদের পড়ায় ফিরে যাই, যেখানে ভাগ্যক্রমে এমন দুইটা আয়াত ছিল '' আর তোমরা নিজ ঘরে অবস্থান করবে এবং প্রাচীন জাহেলী যুগের প্রদর্শনীর মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না। আর তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত প্ৰদান কর এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের অনুগত থাক। হে নবী-পরিবার! আল্লাহ তো শুধু চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।''
[ সুরা আল আহযাব - ৩৩]
'' হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।''
.
যা প্রাথমোক্ত আলোচনার সাথে চমৎকারভাবে মিলে গেছে।
.
বাচ্চাদের ইফেক্টিভ ওয়েতে দ্বীন শিখানোর পদ্বতি হচ্ছে শক্তিশালী দলীল তাদের সামনে উপস্থাপন করা এবং ভিত্তিতে তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করা। তাদের উপর কোনো দৃষ্টিভঙ্গি আরোপ করা অথবা ব্ল্যাকমেইল করা ক্ষেত্রবিশেষ কাউন্টার প্রোডাক্টিভ।
- শাইখ কবির আল আফসার
0 Comments