"The Great Sunni Awakening"

 

২০০৩ সালে সম্পূর্ন বিনা কারণে আমেরিকা ইরাকে হা''মলা করে। কিছুদিনের মধ্যেই তারা শ'ত্রু-মিত্র চিনে নেয়। সেই সময় ইরাকের ২০% জনগণ ছিলো সুন্নি, বাকিরা শিয়া। আমেরিকা টের পেয়ে যায় তাদের মূল বাধা এই সুন্নিরা, সাদ্দাম নিজেও সুন্নি ছিল।
ফালুজা ছিল সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ শহর। ২০০৪ সালে আমেরিকা এই শহর অবরোধ করে।
আমেরিকা আসার পরপরই ইরাকি আর্মির সবার চাকরি চলে যায়। এতগুলো প্রশিক্ষিত মানুষ বেকার না খেয়ে ঘুরে বেড়াবে, আর আমেরিকানদের এমনি এমনি ছেড়ে দেবে, তারা কী ভেবেছিল আসলে?
তখন পর্যন্ত কোনো ইসলামপন্থি সশ''স্ত্র গোষ্ঠী ইরাকে আসেনি। মার্কিনিরা কেবল সাধারণ মানুষই মেরে চলছিল। আর প্রতিরোধ যা আসছিল তা ওই চাকরি হারানো সাবেক সেনাদের কাছ থেকেই।
ইরাকে প্রথম পর্যায়ে মূল যুদ্ধ ছিল আরবান ওয়ারফেয়ার। প্রায় ২,০০০ ইরাকি সশ''স্ত্র যোদ্ধা সুন্নি অধ্যুষিত শহর ফালুজাতে মিশে যায়।
এরপর আমেরিকান আর্মি যা ঘটায়, তারজন্য দুনিয়াবাসি তাদের চিরদিন ঘৃ''ণার চোখে দেখবে।
মার্কিন আর্মির লেফটেনান্ট জেনারেল জেমস ম্যাটিস এক নোংরা কৌশল বেছে নেন, যেটা ছিলো, Hum*iliation (অপ*মান)। যেহেতু ফালুজাবাসি সেখানে থাকা যোদ্ধাদের ব্যপারে কোনো তথ্য দিতে রাজি হচ্ছিল না, তাই তিনি শহরটা অবরোধের সিদ্ধান্ত নেন।
এর আওতায়, সন্ধ্যার দিকে শহর সিল করে দেয়া হত, কেউ ঢুকতে বা বেরোতে পারত না। ফলে যাদের টাকাপয়সা ছিল তারা শহর ছেড়ে দেয়, অপেক্ষাকৃত দরিদ্ররা রয়ে যায়। রাস্তার পাশের গাছগুলো পর্যন্ত জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
রাতে মার্কিনিরা আবাসিক এলাকায় ঢুকে পড়ত। প্রতিটি বাড়ির পুরুষদেরকে সবার আগে হাত-পা বেধে ফেলত। ঘরের বেড-আলমারি-ফ্রিজ সব তছনছ করে ফেলা হত। এরপর তল্লাশির(?) নামে সেই পুরুষদের সামনেই ফ্যামিলির নারী সদস্যদেরকে চুড়ান্ত হেনস্তা করা হত, কাপড় ছিড়ে ফেলা হত। কেউ প্রতিবাদ করলে পুরুষ হলে গুলি আর নারী হলে রেই**প। ছোট বাচ্চারা পর্যন্ত বাদ যেত না।
এক বাড়ি শেষ হলে পরের বাড়ি।
সকালবেলা সেই ছিন্নভিন্ন জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখত কেউ কেউ।'
এরপর রাতের বেলা আবার একই ঘটনা। ইভেন দিনের বেলায়ও।
কোনো কোনো রাতে একাধিকবার। এমনও হয়েছে, এক সপ্তাহে এক বাড়িতেই ৪০ জন মার্কিন সেনা পা ফেলেছে।
এভাবে কয়েক মাস চলতে থাকে।
মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে যায়।
পুরো শহর যেন প্রতিশোধের জন্য ফুঁসতে থাকে।
আমেরিকান সাংবাদিক ডেক্সটার ফিলকিন্স বলেছিলেন, "মুসলিম সমাজে নারীর অসম্মান পুরুষেরা খুবই সিরিয়াসলি নেয়। ইরাকে তো সবকিছুই চলছিল। কিন্তু একটা যুবক যখন দেখছে বিদেশী সৈন্য ওয়ারড্রব খুলে তার স্ত্রীর আন্ডারওয়ার নাড়াচাড়া করছে, সে মোটেও চুপ করে থাকবে না।"
কতটা সিরিয়াসলি নেয় তা কিছুদিন পরই দেখা যায়। আমেরিকা ফালুজাতে ২,০০০ লোকের মোকাবেলা করতে গেছিল। কিন্তু এই নোংরা ঘটনার পর মাত্র একটা শহর থেকেই ২০,০০০ (বিশ হাজার) লোক হাতিয়ার তুলে নেয়। এই ঘটনাকে পরবর্তিতে 'সুন্নিদের মহজাগরণ' নামে ডাকা হয়।
আপনারা উইকিপিডিয়াতে The Great Sunni Awakening লিখে সার্চ করলে আরো জানতে পারবেন। আর বিবিসির ডকুমেন্টারি Once Upon a Time in Iraq - এ সাংবাদিক ডেক্সটারের বক্তব্য আছে।
এই লোকগুলো তো সন্ত্রা''সী ছিলো না। তাদের কোনো নেতাও ছিলো না, ক্ষমতায়ও যেতে চায়নি। তারা কেবল চেয়েছিল কোনো বিদেশী আর্মি যেন তাদের ওয়ারড্রব না খোলে।
--------------------------
✍ Ahmad Khan

Post a Comment

0 Comments