আপনার বেতন যদি ৫০,০০০/- এর আশেপাশে হয়, তাহলে আপনাকে একটা মজার জিনিস দেখাই



আপনার বেতন যদি ৫০,০০০/- এর আশেপাশে হয়, তাহলে আপনাকে একটা মজার জিনিস দেখাই।

২০১১ সালে ডলারের দাম ছিল ৭৭ টাকার আশেপাশে।
২০২১ সালে সেটা হলো ৮৫ টাকা।
তার মানে, ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ডে আপনি ২০১১ সালে বেতন পেতেন ৬৪৯ ডলার (ভগ্নাংশ বাদ দিচ্ছি সব জায়গাতেই)।
পরবর্তী ১০ বছরে আপনার বেতন যদি ইনক্রিমেন্টে ৫০০ টাকা করেও বাড়ে, তাহলে আপনার বেতন ২০২১-এ ৫৫,০০০ টাকা। মানে ডলারে ৬৪৭ ডলার (২০২১-এ ১ ডলার = ৮৫ টাকা ধরে)।
অর্থাৎ, বৈশ্বিক ইনফ্ল্যাশনের সাথে তালমিল রাখতেই আপনাকে ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হয়েছে, এবং সেটা আপনার বেতনকে মোটামুটি সাম্যাবস্থায়ই রেখেছে। যদিও এটা ঠিক প্রসেস না, কারণ এই ১০ বছরে আপনার কাজের মান বেড়েছে, অভিজ্ঞতা বেড়েছে, বাসায় মানুষ বেড়েছে, খরচ বেড়েছে, তাই আপনার বেতনও বাড়া উচিত ছিল। কিন্তু তারপরও তর্কের খাতিরে ধরে নিচ্ছি এই সাম্যাবস্থাটাই অনেক বড় পাওয়া।
এবার আসুন গত তিন বছরের হিসেবে। ২০২১-এ ৫০,০০০/- বেতনের চাকরী করা একজন মানুষ ২০২৪-এ সর্বোচ্চ ৫১,৫০০/- বেতন পাচ্ছেন। বা একটু বাড়িয়ে ধরলাম ৫২,০০০/-
২০২১-এ আপনি ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ডে বেতন পেতেন ৫৮৮ ডলার।
২০২৪-এ এসে আপনি বেতন কতো পান জানেন?
৫২,০০০ ÷ ১২৫ = ৪১৬ ডলার!!
এই যে আপনার তিন বছরে চাকরীর অভিজ্ঞতা বাড়লো, কাজের মান বৃদ্ধি পেলো, ঘরে খরচ বাড়লো, তাহলে আপনার বেতন কমলো কেন? কেউ জানলো না আপনার বেতন যে কমে গেছে, কারণ, ব্যাংক একাউন্টেতো আগের চেয়ে দেড়-দুই হাজার টাকা বেশি ঢুকছে। কিন্তু বাস্তবে আপনার বেতন কতো?
----
যেই বেচারা ৫০,০০০/- বেতনের চাকরী করে তার থেকে ১০-১৫ হাজার টাকা জমানোর চিন্তা করতে পারতো ভবিষ্যতের কথা ভেবে, সেই বেচারা এখন জমানোর চিন্তা বা নিজের শখ পূরণের চিন্তা তো দূরের কথা, নিজের পরিবারের বেসিক নীডস পূরণ করতেও হিমশিম খাচ্ছে!
---
দোষ কাকে দিব জানি না। কেউই জানে না। অথবা জানলেও বলে না। কেউ ১৫ লাখ টাকা দামের ছাগল কিনে ইনস্টাগ্রামে রীলস বানায়। আর কেউ ভাগে কুরবানি দিতে গেলেও ১৫ হাজার টাকা দিতে হিমশিম খাচ্ছে।
যে সৎভাবে বাঁচতে চায় সে প্রতি রাতে মরতেছে মানসিক প্রেশারে, আর যে অসৎভাবে চলতেছে সে রাজার হালে বেহেশতি সুখ নিচ্ছে!
---
একটা গল্প পড়েছিলাম একবার। এক ছেলে গ্রাম থেকে শহরে গিয়ে এদিক-সেদিক ঘুরতো। তেমন কিছুই করতো না, জাস্ট লাইনঘাট খুঁজতো। এর সাথে তার সাথে ভাল সম্পর্ক রাখতো। প্রতিবার গ্রামে যাওয়ার সময় টাকা ধার করে তারপর ভাল কাপড়চোপড় পরে এসি বাসে অথবা কার ভাড়া করে গ্রামে যেতো। গ্রামের সবাইকে দেখাতো সে কতো ভাল আছে! গ্রামের সবাই তখন তার বাড়ি এসে জানতে চাইতো সে কিভাবে এতো ইনকাম করছে? তাদের ছেলেদের জন্যও কিছু একটা করার আবদার করতো।
তখন সেই ছেলে বলতো সে দেশের বাইরে লোক পাঠায়। ওনারা চাইলে কোনো বাড়তি খরচ না নিয়েই সে তাদের ছেলেদের বাইরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিবে।
সরল মনে লোকজন তাকে টাকা দিলো। এরপর সে বড় অংকের টাকা নিয়ে নিজেই দেশের বাইরে চলে গেলো!
মজার বিষয় হলো - সে গায়েব হয়ে যাওয়ার পর যারা মাথা চাপড়াচ্ছিলো, সেই মানুষগুলোকে সে কয়েক বছর পর থেকে অল্প পরিমাণে টাকা ফেরত দেওয়া শুরু করলো। এভাবে প্রায় বছর দশেক পর সে সব টাকাই যখন ফেরত দিয়ে দিলো, তখন গ্রামের মানুষের কাছে সে পীর-ফকির পর্যায়ের লোক হয়ে গেলো! কারণ, এই অন্ধকার জগতে এমন ভাল মানুষতো আর পাওয়া যায় না!! যে কিনা দশ বছর পরে হলেও মানুষের টাকা ফেরত দিয়ে দেয়!
কেউ জানলো না তার ওই বাটপারির টাকাটা ছিল তার নিজের জীবনের ইনভেস্টমেন্ট! কেউ জানলো না তার গায়েব হয়ে যাওয়াটা ছিল একটা বড় ধরনের স্ক্যাম! কেউ জানলো না ১০ বছর আগের টাকার মান আর ১০ বছর পরের টাকার মান সেইম না!
কেউ জানলো না ওই বাটপারকে প্রাথমিকভাবে টাকা ধার দিয়ে মিথ্যা লেবাস নিতে সহযোগিতা করা মানুষগুলোও সমানভাবেই দোষী!
---
জীবন চলে যাচ্ছে। কেউ হিমশিম খেয়ে পার করে দিচ্ছে। কেউ সাদিক এগ্রোর কোটি টাকার গরু খেয়ে পার করে দিচ্ছে। কেউ পুরো দেশ খেয়ে রিসোর্ট-হোটেল বানায়ে বিদেশে বসে পার করে দিচ্ছে। মাঝে আমরা হয়ে যাচ্ছি খাদ্যদ্রব্য! ওনারা আমাদেরকেই খেয়ে দিচ্ছে!
ওই ১৫ লাখ টাকা দামের ছাগলটা আসলে একটা আয়না। ছাগলটা আমরাই! 🙂
**পোস্টের সাথের ছবিটা এমনেই দিলাম, টাকার মান বুঝাতে! **

Post a Comment

0 Comments