"এক প্রতারিত স্বামী ও বাবার প্রতিশোধের গল্প"



আমার বয়স এখন ৪৮ বছর। এই গল্পের শুরু যখন আমার বয়স ২০ বছর, তখন থেকে। ১৯ বছর বয়সী এক মেয়ের সাথে দেখা হয়। সে ছিলো পুরোপুরি পারফেক্ট। দুই বছর ডেটের পর ও প্রেগন্যান্ট হয়। তারপর আমরা এক বাসাতে মুভ করে যাই।
আমি আমার মায়ের সাথে থাকতাম। ১৫ বছর বয়সে আমার বাবা মারা যান। মা আর বিয়ে করেননি। তার একটা কন্সাল্টেন্সি ফার্ম ছিলো যেখানে আমি রিসিপশনিস্টের কাজ করতাম।
২৩ বছর বয়সে আমি এক মেয়ের বাবা হই। বাচ্চাটা ছিলো দুনিয়ার সবচেয়ে সুন্দর বাচ্চা। ওর জন্মের পর আমার সাথে আমার গার্লফ্রেন্ডের সম্পর্ক আরো মজবুত হলো। এর দুই বছর পর, আমরা বিয়ে করি।
আমি কম্পিউটার প্রোগ্রামারের এক চাকরিতে যোগ দিই। ওই সময়ে হাই ডিমান্ডের কারণে আমি সিক্স ফিগার ইনকাম করতে শুরু করি। আমাদের লাইফ সুন্দর হতে শুরু করেছে।
আমার স্ত্রী হাউজওয়াইফ হতে চাইলো। আমি রাজি ছিলাম। তবে বলেছিলাম, সে সময় কাটাতে চাইলে পার্ট-টাইম জবও করতে পারে।
আমার লাইফের প্রথম ধাক্কাটা আসে যখন আমার বয়স ২৯, আমার শ্বশুর অ্যাক্সিডেন্ট করেন। তার কোমর থেকে নিচের অংশ পুরোপুরি অচল হয়ে যায়। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে, তিনি ছিলেন তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি।
আমার শ্বশুরবাড়ীর লোকজন একটা ভাড়া বাসায় থাকত। কিন্তু পরিবারের একমাত্র উপার্জন বন্ধ হওয়ায় অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা দেয়। আমি আমার মায়ের সাথে কথা বলি। একপর্যায়ে আমার শ্বশুর, শ্বাশুড়ী ও শ্যালিকা আমার বাসায় এসে ওঠে ও থাকতে শুরু করে। আমার স্ত্রী ও শ্যালিকা পার্ট-টাইম জব নেয়।
একটা ঝামেলা দেখা দেয়। আমার দাদী আমাকে কিছু সম্পত্ত্বি দিয়েছিলেন। যেটা আমার মা দুই ভাগ করে এক ভাগ আমার কলেজের খরচ হিসেবে রেখেছিলেন, আরেক ভাগ ইন্সুরেন্সে জমা ছিলো। আমার স্ত্রী চাচ্ছিলো ঐ টাকা তুলে একটা বড় বাড়ী কিনতে। তাতে আমার সমস্যা ছিলো না। কিন্তু ঝামেলা হলো, সে ওই বাড়ীটা তার মা অর্থাৎ আমার শ্বাশুড়ীর নামে কিনতে চাচ্ছিলো। আমার খুবই অদ্ভুত লাগলো। আমাদের মধ্যে খানিকটা দুরত্ব তৈরী হল।
****
দুই বছর পর। আমার মা স্ট্রোক করলেন। সার্জারি করতে হলো। এটা সাকসেসফুল ছিলো, কিন্তু আমার স্ত্রী চাচ্ছিলো মা যেন বাসার পরিবর্তে হাসপাতালে থাকেন। তার মতে, এক বাড়ীতে দুজন রোগী (শ্বশুরসহ) থাকলে দেখাশোনায় কষ্ট হতে পারে। আমি রাজি হলাম, তবে মায়ের জন্য একজন নার্স রেখে দেবো বললাম। সে দ্বীমত করলো, বলল, হয় তার বাবার জন্যও একজন নার্স রাখতে হবে, নইলে একটাও না।
আমি আমার স্ত্রীকে বললাম, এবার তোমার বাবার কিছু খরচ তোমার নিজেরও বহন করা উচিত। কারণ আমি অলরেডি , বাজারসদাই, ট্যাক্স, মেয়ের প্রাইভেট স্কু্ল, তার পুরো ফ্যামিলির খরচসহ সংসারের সমস্ত খরচ বহন করছি। এখন আবার এই নার্সের ফি। বলে রাখা ভালো তারা দুইবোন মিলে বছরে প্রায় ৬০ হাজার ডলার আয় করত।
তখন আমার মেয়ের বয়স ৮ বছরে পড়লো। তার সাথে আমার সম্পর্ক একটু তিক্ত হতে থাকলো। সে প্রায়ই আমাকে অশ্রদ্ধা করতে লাগলো। আমি ভাবলাম, বয়সন্ধির সময় এরকম হয়ত হয়।
আমার মা দ্রুত সেরে উঠলেন। সুস্থ হয়ে তিনি চাচ্ছিলেন সেই কন্সালটেন্সি ফার্ম বিক্রি করে দেবেন এবং টাকাটা আমার নামে থাকবে। আমার স্ত্রী তৎক্ষণাৎ ঝগড়া শুরু করলো। তার দাবী ঐ টাকাটা আমার মেয়ে এবং আমার স্ত্রীর নামে দিতে হবে। তার যুক্তি, আমি অলরেডি আমার দাদীর কাছ থেকে কিছু সম্পত্ত্বি পেয়েছি। সবচেয়ে আশ্চর্য্য লাগলো, আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ী সেখানেই ছিলো, তারা তাদের মেয়েকে একটা কথাও বলল না!
আমার মা মুখ খুললেন। বললেন, এটা তার টাকা এবং তিনি সেটা পুত্রবধুকে দেবেন না। আমার স্ত্রীর সমস্যা ছিলো, আমাদের ব্যাংক একাউন্ট জয়েন্ট ছিলো না, সে আমার টাকায় হাত দিতে পারত না।
যাইহোক, শেষপর্যন্ত মা পুরো টাকাটাই আমাকে দিলেন। ওই ঘটনার শেষ ওখানেই।
********
কয়েক মাস পর দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমার শ্বশুর মারা গেলেন। আমার স্ত্রী ভেঙ্গে পড়েছিলো। আমি চাকরীর পরে ঘরে কাজকর্মও সামলাতে শুরু করলাম। আমার স্ত্রী পাশের ঘরে মেয়ের সাথে ঘুমোনো শুরু করলো। আমি তাকে কনভিন্স করলাম থেরাপিতে যাওয়ার জন্য। তাতে কাজ হলো। আমার স্ত্রীর সাথে আমার সম্পর্ক মোটামুটি স্বাভাবিক হয়ে এলো।
কিন্তু কেন যেন আমার মেয়ের সাথে সম্পর্ক খারাপ হতে থাকলো। আমি কিছু বলার চেষ্টা করলেই সে থামিয়ে দিত। ওর বয়স এখন নয় বছর, আমি গত দুই বছর ধরে মেয়ের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখার চেষ্টা করছি।
***********
এর মধ্যে মা আবার স্ট্রোক করলেন। এবার আর ফিরলেন না। আমার পুরো দুনিয়া যেন ভেঙ্গে পড়লো। দেখুন, বাবা ব্যস্ত থাকতেন, আমার মা একরকম একাই আমাকে বড় করেছেন।
আমার মেয়ে শেষকৃত্যে এলো না। এত কষ্ট পেয়েছিলাম বলার মত নয়।
সবমিলিয়ে আমি ডিপ্রেশনে চলে গেলাম। আমার স্ত্রী কেয়ারই করলো না। এরমধ্যে এক হতবাক করা ঘটনা ঘটে গেলো। আমার শ্বাশুড়ী আমাকে বলল, "তুমি অতিরিক্ত ডীপ্রেসড থাকো। ঘরের পরিবেশ নষ্ট করছো, অন্য কোথাও চলে যাও"
আমি আকাশ থেকে পড়লাম। শান্তভাবে বললাম, 'আমি আপনাকে মনে করিয়ে দিই, আপনার স্বামী মারা গেলে আপনি ও আপনার মেয়ে প্রায় ৬-৭ মাস শোক পালন করেছেন। আমি একবারের জন্যও বেরিয়ে যেতে বলিনি। আপনার সাহস হয় কিভাবে আমার বাড়ী থেকে আমাকেই বের হয়ে যেতে বলতে?"
সে চুপ হয়ে গেলো। আমি স্ত্রীকে ব্যাপারটা জানালাম, সে কিছু বলল না।
ওই ঘটনার দুই দিন পর আমি ফ্রিজ থেকে কিছু একটা নিতে যাচ্ছিলাম, তখন আমার মেয়ের ফোনের একটা টেক্সট খেয়াল করলাম, "ভালোই হয়েছে ডাইনীটা মরেছে, এবার পুরো বাড়ীটাই তোমার। তোমার জন্মদিনে আমরা একটা পার্টি করবো"
এসব কী? ওর বয়স মাত্র ১১। আর 'ডাইনী'? পুরো কনভার্সেশন পড়লাম, আমার মা-কে বুঝিয়েছে। আমাকে সম্বোধন করেছে 'বানর' বলে। আমার স্ত্রীকে ডেকে ফোনটা দেখালাম। সে উলটো বলল মেয়ের ফোন হাতে নিয়েছি কেন? আমাদের ঝগড়া হলো। সে আবার পাশের রুমে ঘুমোতে লাগলো এবং আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলো। পরবর্তিতে মেয়ের জন্মদিনে আবার কথা বলা শুরু করে।
*******
আরো তিন বছর কেটে গেলো। আমার বয়স ৩৮, স্ত্রীর ৩৭ আর মেয়ের ১৫।
আমি জব চেঞ্জ করেছি। ইনকামের সাথে সুযোগ সুবিধাও বেড়েছে।
একটা সামিটের জন্য ভিন্ন শহরে ৪ মাসের জন্য যেতে হলো।
ফিরে এসে দেখি আমার স্ত্রীর আচরণ পুরোপুরি বদলে গেছে। সে তার জব ছেড়ে দিয়েছে। বন্ধু-বান্ধবের সাথে ঘোরাঘুরি বাড়িয়ে দিয়েছে। এবং আমি ব্যাপারগুলো সমর্থন করলাম। ভেবেছিলাম বয়সের সাথে অভ্যাসের পরিবর্তন, এবং আমি কিছু মনে করিনি।
কিন্তু আমার মেয়ে আমাকে প্রকাশ্যে অশ্রদ্ধা করা শুরু করলো। তার বেয়াদবি মাত্রা ছাড়িয়ে যেতে লাগলো। আমি খুব কষ্টে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করছি। স্ত্রী-শ্বাশুড়ী-শ্যালিকা সবাই বলল, হরমোনের ব্যাপার, বয়সন্ধির কারণে এরকম করছে, পরে ঠিক হয়ে যাবে। আমি মনে মনে অসন্তষ্ট থাকলেও তাদের কথা বিশ্বাস করলাম।
আমার সেক্সুয়াল লাইফের বারোটা বেজে গেলো। আর এরপর থেকে পরিস্থিতি কেবলই খারাপের দিকে যেতে থাকলো।
একদিন হঠাত করেই আমার স্ত্রী শ্যালিকা ও মেয়েকে নিয়ে একটা ট্রিপে যেতে চাইলো। যদিও বেশ মোটা অংকের টাকা দিতে হয়েছিল, কিন্ত তাতে আমার কোনো আপত্তি ছিলো না।
টানা তিনদিন সে আমাকে ফোন করলো না। তার মায়ের সাথে চ্যাট করছিলো। সে ফিরে আসার পর জিজ্ঞেস করলে বলল সে ক্লান্ত ছিলো। ট্রিপের কিছু ছবি দেখালো। সেখানে তারা বন্ধুদের সাথে ফটো ছিলো। সেখানে পুরুষ বন্ধুও ছিলো, কিন্তু সন্দেহজনক তেমন কিছু চোখে পড়লো না।
এর দুই মাস পর আমার মেয়ের জন্মদিন। আমি বড় কিছু প্লান করলাম। আমার স্ত্রী বলল এবারের জন্মদিন সে তার বান্ধবীদের সাথে পালন করতে চায়। আমি প্রতিবাদ করলাম। নিজের মেয়ের জন্মদিন ফ্যামিলি ছেড়ে কে বান্ধবীদের সাথে পালন করে? সে বলল, কেবল তার বান্ধবী ও তাদের মেয়েরাই থাকবে আর কোনো অ্যালকোহল থাকবে না। আমি রাজী হলাম।
এর কিছুদিন পর ছিলো আমার জন্মদিন। আমার জন্মদিন বাড়ীতে পালন করা হতো না বটে, কিন্তু আমার স্ত্রী গিফট দিত। কিন্তু এবারের দিন সে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো। কোনো ফোন নেই, টেক্সট নেই, গিফট নেই। ফিরলে বলল কে জানি অ্যাক্সিডেন্ট করেছে।
আমার স্ত্রী আমাকে চুড়ান্ত অবহেলা করতে থাকলো। ইভেন সেক্সুয়াল লাইফও না বরাবর - সে কেবল অজুহাত দিয়ে সরে যেত।
এরপর আমার লাইফের সবচেয়ে বড় আঘাতটা পেলাম।
*************
দুই সপ্তাহ পর। আমার স্ত্রী আমার মেয়ের ফোনে তার স্কুলের ক্যাম্পের কিছু ফটো দেখাচ্ছিলো। কী একটা কাজে মেয়ে ডাকল এবং আমার স্ত্রী উঠে চলে গেল। মেয়ের ফোন আমার হাতে। এমন সময় ফোনে একটা টেক্সট আসলো, "হেই, আমার মেয়ে, স্যরি আমি দেরী করে রিপ্লে দিচ্ছি। আমি লাকি যে তোমার মায়ের বয়ফ্রেন্ড। তোমার মা-কে বলো, তাকে ভালোবাসি, আমার তরফ থেকে কিস। আমি পরে কথা বলবো।"
আমি কিছু বুঝলাম না। কার মেয়ে, কিসের বয়ফ্রেন্ড? প্রায় মিনিটখানেক ধরে টেক্সটটা আমি কয়েকবার পড়লাম। কিছু বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমি স্ক্রোল করে উপরের কিছু মেসেজ দেখলাম। একজায়গায় আমার মেয়ে লিখেছে, "তুমিই আমার বাবা হলে ভালোই হত"
হোয়াট?!!?
আমি ফোনটা নিয়ে বাথরুমে গেলাম। পুরো কনভার্সেশন পড়লাম।
এই লোকটা আমার স্ত্রীর সাথে পরকীয়া করছে আর আমার মেয়ে সেটা জানে! আমার মেয়ে জানে!! দুনিয়াতে হচ্ছেটা কী?
আমি কিছু ভ্যাকেশনের ছবি দেখলাম। কিছু ট্রিপ, আমার মেয়ের জন্মদিনের ছবি। আমার স্ত্রী, মেয়ে আর ওই লোকটা ফ্যামিলি হিসেবে ক্যান্ডল লাইট ডিনার করছে। একটাতে আমার স্ত্রী আর তার প্রেমিক কিস করছে, আমার মেয়ে তাদের দিকে হাত দিয়ে দেখাচ্ছে। জানলাম, আমার শ্যালিকাও সব জানে।
আমি যত স্ক্রোল করার চেষ্টা করলাম, বুকটা তত ভেঙ্গে এলো।
আমার স্ত্রী আর মেয়ে দুজনই লোকটার সাথে কথা বলে। ওই লোক আমার ফ্যামিলির ব্যাপারে সব জানে।
মনে আছে সেই টেক্সট, আমার মা-কে ডাইনি বলেছিল? কিংবা আমার জন্মদিনের কথা, ওরা সেদিন আমার বাড়ীতে মিট করেছে। আমি চার মাসের ট্রিপে গিয়েছিলাম, ওরা একদম আমার বেডটায় সেক্স করেছে।
এই পরকীয়া চলছে গত ৪ বছর ধরে! পুরো চার বছর!!?
আমি বাথরুমের দরজায় আঘাতের শব্দ শুনলাম। আমার মেয়ে। বাইরে বেরিয়ে আমার মেয়ের চোখে তাকালাম। ওরকম কোনোদিন তাকাইনি। তার মুখ লাল হয়ে গিয়েছে, কাঁদছে।
আমার স্ত্রী, শ্বাশুড়ী, শ্যালিকা সবাই ওখানে ছিলো। শ্বাশুড়িকে জিজ্ঞেস করলাম, "আপনি কিছু জানতেন?"
আমার স্ত্রী বললো, চলো আমরা কথা বলি। আমি চিৎকার করে উঠলাম, "চুপ করো, নইলে এখনি গলা টিপে মেরে ফেলবো।" এত জোরে বলেছিলাম, প্রতিবেশীরাও হয়ত শুনতে পেয়েছিলো।
আবার শ্বাশুড়িকে জিজ্ঞেস করলাম। সে হ্যাঁ-সুচক মাথা নাড়লো। তার মেয়ে পরকীয়া করতো আর সে জানতো!
আমার মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম, "মা, আমি খুবই দুঃখিত, তোমার জন্য একজন ভালো বাবা হতে পারিনি। কিন্তু একটা কাজ করবো, তোমার মাকে ডিভোর্স দেবো। যাতে তুমি যাকে সবসময় চেয়েছিলে, ঐ লোকটা তোমার বাবা হতে পারে।"
স্ত্রীকে বললাম, তোমার হাতে ৯ দিন সময় আছে (মাসের শেষ পর্যন্ত)। আমি ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দেবো। কিন্তু তুমি আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবে।
আমার স্ত্রী কাঁদছিল। সে আমার রেসপন্স দেখে আশ্চর্য হয়েছিলো। কিন্তু আমার ঝগড়া করার মুড ছিলো না।
ওই রাতে ঘুমোতে পারলাম না। সারারাত কেবল দেয়াল আর ফ্যামিলি ফটোর দিকে তাকিয়ে কাটালাম। এই তবে সংসার!
সব শেষ। আমি হাল ছেড়ে দিয়েছি।
********
পরদিন সকালে আমার স্ত্রীকে বললাম, "খাবার দিও না, আমি তোমাকে আর বিশ্বাস করি না। আর আজই ডিভোর্স ফাইল করবো।"
সে ভেঙ্গে পড়লো। আমার শ্বাশুড়ী বলল তার সাথে একবার কথা বলতে। আমি কারো কথা শুনতে রাজী ছিলাম না।
আমার এক উকিল বন্ধু ছিলো। তাকে সব খুলে বললাম। বলল, আমার ১২ বছরের ওকালতি জীবনে এরকম করুণ ঘটনা শুনিনি। আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
তাদের পরিচিত এক জাজের কোর্টে মামলাটা তুলবে বলে জানালো।
কিন্তু তার আগে আমার প্রচুর প্রমাণ জোগাড় করা দরকার। সে একজন পিআই (প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটরের) নম্বর দিলো।
আমার মেয়ের ফোন ঘেটে দেখা হলো, নাথিং। সব মুছে ফেলেছে। বাসায় ফিরে স্ত্রীর সাথে কথা বললাম। সে বহুবার স্যরি বলল, কিন্তু মুখে অনুশোচনার ছাপটাও ছিলো না। মেয়েসহ বাকিরা আমার কাছে আসতে সাহস পেলো না। আমার মেয়ে ইভেন ভয়ে দুইদিন তার বান্ধবীর বাসায় থাকলো। সেই বান্ধবীর বাবা আমাকে ফোন করলে আমাকে সিচুয়েশন ব্যখ্যা করতে হলো। ভদ্রলোক দুঃখপ্রকাশ করলেন। বললেন, "ঘটনাটা হতবাক করে দেওয়ার মত।"
আসলেও তাই। কোন বাবা তার মেয়ের কাছ থেকে এরকম বিশ্বাসঘাতকতার স্বপ্ন দেখে থাকে?
পিআই সেই পরকীয়া প্রেমিককে খুঁজে বের করলো। জানা গেলো, লোকটা একেবারে লো লাইফ, গ্রামের দিকে থাকে। চুরির জন্য একবার ধরা পড়েছিলো। আর আমার স্ত্রীর কর্মস্থলে কাজ করত।
আমি, আমার উকিল, পিআই এবং একজন পরিচিত পুলিশ নিয়ে তার বাড়ীতে গেলাম। একটু চেপে ধরতেই সে সব খুলে বলল। সে নাকি কার সাথে চ্যালেঞ্জ করেছিলো আমার স্ত্রীকে বেডে নিয়ে দেখাবে। তারপর থেকে ব্যাপারটা অ্যাফেয়ারে রুপ নেয়। জানলাম, এই সেই লোক, যে আমার মা-কে ডাইনি বলেছিলো।
সে ভিডিও আর লিখিত স্বীকারোক্তি দিতে রাজী হলো, সাথে কিছু ছবিও। কিন্তু কয়েকটা শর্ত দিলো। তার কর্মস্থলে এই খবর দেওয়া যাবে না। আর তার মা ৬০+ বয়সী হার্টের রোগী, তাকেও জানানো যাবে না। আর কয়েক হাজার ডলার। আমি রাজী হলাম।
আমার স্ত্রী বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে গেলো। তার ফ্যামিলির সাথে এক ভাড়া বাসায় উঠলো। আমার কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিলো সেজন্য।
ডিভোর্স শুনানি। আমি যাবতীয় প্রমাণ সামনে রাখলাম। প্রতিটি স্ক্রিনশট, প্রতিটি ছবি, তার প্রেমিকের স্বীকারোক্তির ভিডিও, তাদের হাত ধরা আর কিস করার ছবি। আমার স্ত্রী হকচকিয়ে গেলো। আমি এতদূর যেতে পারি সে ভাবতে পারে নি। সে আদালতে বলার চেষ্টা করলো, আমি নাকি তাকে নির্যাতন করেছি। কিন্তু সেটা বেশিক্ষণ টিকলো না, কোনো প্রমাণ নেই। আমি যদি নির্যাতনই করে থাকি তাহলে কিভাবে তার পুরো ফ্যামিলিকে এত বছর ধরে টেনে চলেছি? তাকে জব করতেও তো বাঁধা দিইনি।
সে হাল ছেড়ে দিলো। বারবার স্যরি বলল, সে নাকি বাকী জীবন মাশুল দিতে রাজী আছে।
জাজ বললো, আমাকে আগামী চার বছর ভরণপোষন দিতে হবে। কাস্টডি নিয়ে ঝামেলা হলো না কারণ আমাদের মেয়ের বয়স ১৭ বছর, সে তার মায়ের সাথে থাকবে। আর আমার স্ত্রী আমার বাড়ীটার অর্ধেক পাবে, যেটা আমি টাকা দিয়ে তার কাছ থেকে কিনে নিলাম।
তারপর আমি জাজকে একটা অনুরোধ করলাম। বললাম, আমি আমার মেয়ের বার্থ সার্টিফিকেট থেকে আমার নামটা বাদ দিতে চাই। যেটা সম্ভব ছিলো না। বললাম, তাহলে মেয়েকে তাজ্য করবো।
আমার স্ত্রীর মুখ তখন দেখার মত ছিলো, পুরো ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। সে বলল, তুমি এটা কিভাবে করতে পারো? আমি মনে করিয়ে দিলাম, এটা পুরোপুরি তোমার দোষ। এতসব তোমার কারণেই হয়েছে।
মেয়ে চেঁচিয়ে বলল, বাবা তুমি কোর্টে এটা করতে পারো না। আমি ইগনোর করলাম।
জাজ একজন ভদ্রলোক, তিনি আমার অবস্থা বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি বললেন ক্ষমা করে দিতে। আর তাজ্য করার জন্য তো কোনো আইন নেই, কিন্তু আমি চাইলে মেয়েকে আমার উত্তরাধিকারের তালিকা থেকে বাদ দিতে পারি। আমি তাই করলাম।
*******
ডিভোর্স ফাইনালাইজ হতে ৮ মাস লাগলো। আমি আমার জীবনে এত খুশী কোনোদিনও ছিলাম না। কোর্ট থেকে বেরিয়ে আমার উকিলকে জড়িয়ে ধরলাম, সে আমাকে বাচিয়ে দিয়েছে।
সাবেক স্ত্রী ও মেয়ে দেখা করতে এলো। স্ত্রী বলল, তার ক্ষমা চাওয়ার মুখ নেই, কিন্তু মন বলে কিছু থাকলে তাকে মাফ করে দিতে। আমি বললাম, আমার হার্ট বলে তো কিছু নেই! যা ছিলো সে-ই তো ভেঙ্গে দিয়েছে।
মেয়ে স্যরি বলল। আরেকটা সুযোগ চাইলো, এবার সে পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মেয়ে হয়ে থাকবে। এই মেয়ের আমাকে বাবা ডাকার সাহস এখনো রয়েছে!
আমি মনে করিয়ে দিলাম, আমি তার বাবা নই। আমি হচ্ছি তার ভাষায় একটা বানর। তার খুশী হওয়া উচিত কারণ তার মা এখন সিঙ্গেল।
এবার আমার ফাইনাল প্রতিশোধের পালা। উকিলকে বললাম, আমার স্ত্রীর কোম্পানিতে তার এই কীর্তি জানাতে পারবো কিনা। জানালো, আগে একটা রেস্ট্রেইনিং অর্ডার নিতে। কিছু পয়সা খরচ করে সেটা নিলাম।
এবার সব প্রমাণের ৫ কপি বানালাম। একটা স্ত্রীর কোম্পানিতে, একটা আমার উকিলের কাছে, আরেক কপি সেই প্রেমিকের মায়ের কাছে। সে বলেছিলো না বলতে, কিন্তু আমি কেয়ার করি না। সে আমার সংসার শেষ করেছে, আমার মা-কে অসম্মান করেছে।
এক কপি পুড়িয়ে ফেললাম, শেষ কপিটা আছে আমার লকারে।
ফলাফল হলো দারুণ। স্ত্রী ও বয়ফ্রেন্ড দুজনের চাকরিই চলে গেলো। আমার শ্যালিকা আমাকে ফোন করে চেচামেচি করতে লাগলো। বললো, আপনাকে ভদ্রলোক বলে জানতাম, কিন্তু আপনি কিভাবে আমার বোনের ক্যারিয়ার নষ্ট করতে পারেন?
আমি হাসলাম। বললাম, তুমি তোমার বোনের পরকীয়া সমর্থন করেছো। আমার ঘর ভেঙ্গে দিয়েছো। এমন কোন সম্ভাবনা আছে যে বোনের বয়ফ্রেন্ডের সাথে বেডে যেতে পারো?
সে আমাকে ব্লক করলো।
শ্বাশুড়ি ফোন দিলো। ক্ষমা চেয়ে বলল, আমি আমার মেয়েদের ঠিকমত বড় করতে পারিনি। আমি তাকে বললাম, "আপনি একজন খারাপ ও লোভী মহিলা। আপনার স্বামীর অ্যাক্সিডেন্টের পর থেকে এতগুলো বছর আমি আপনার পুরো পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছি। আপনি মরলেও এখন আমার কিছু যায় আসে না।"
সেই প্রেমিকের মা মারা গেলো। তার মা সবসময়ই এই পরকীয়া ঘৃণা করে এসেছেন কারণ তার স্বামীও এই কারণে সন্তান জন্মের আগেই ছেড়ে গিয়েছিলো। এরপর ছেলের এই অধঃপতন নিতে পারেন নি। আমার একটু খারাপ লেগেছিল, কিন্তু থেরাপিস্ট বলল এটা আমার দোষ নয়। আজ আমার জীবনে সবগুলো কষ্টের কারণ এই লোকটা।
মেয়ে লাগাতার ফোন করে গেলো। ব্লক করেও লাভ হচ্ছিলো না। আমি আমার নম্বর চেঞ্জ করে ফেললাম।
******
ডিভোর্স ফাইনালাইজ হবার পর বাড়ীটা বিক্রি করে অন্য শহরে মুভ করলাম। সব নতুন করে শুরু করলাম। জিম, বক্সিং নতুন জব।
৪২ বছর বয়সে আবার ডেটে গেলাম। তার দুই বছর পর ৪৪ বছর বয়সে আবার বিয়ে করেছি। চার বছরের এক ছেলে রয়েছে নতুন স্ত্রীর সাথে। আমি উইলে মেয়েকে পুরোপুরি বাদ দিয়ে আমার ছেলেকে সমস্ত সম্পত্ত্বি দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

Post a Comment

0 Comments