রিলেশনে গোলমালের জের ধরে ক্যারিয়ার বিসর্জনের গল্পটা আজকাল ডাল ভাতের মতো হয়ে গেছে। একেবারেই সিম্পল আর খুব কমন ঘটনা। রিলেশনে টানা হেঁচড়া থেকে মানসিক অশান্তি । এরপর পড়াশুনায় ঢিল। ফলাফল হচ্ছে খারাপ রেজাল্ট এবং পরবর্তিতে ক্যারিয়ারে ঝামেলা তৈরি হওয়া।
সব থেকে মেধাবী ছেলেটার যে পজিশনে থাকার কথা ছিল আজকে সে রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। অফিস টাইমে টং দোকানে বসে চা খায়।
ক্লাসের সব থেকে ট্যালেন্টেড মেয়েটার সিজিপিএ 3.9 থেকে একটানে নেমে গেলো 3.1 এ। কেউ জানে না কেন এমন হয়েছে। মেয়ের এই পরিবর্তন দেখে বাপ মাও অবাক।
আমার কেন জানি মনে হয় জীবনের একটা পর্যায়ে এসে স্বার্থপর হওয়া জরুরী। একটা সময়ে এসে ইমোশোন গুলোকে বস্তাবন্দি করে রাখা উচিত। একটা সময়ে রিলেশন ,ইথিক্স এই জিনিসগুলা বাদ দেয়া উচিত। মোস্ট অব দ্যা টাইম এইসব ইমোশন ভালো ফল বয়ে আনে না।
ছেকা খেয়ে বেকা হয়ে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার যে গল্প গুলো প্রচলিত আছে সেগুলো খুব কম মানুষের জন্যই প্রযোজ্য। বেশিরভাগ মানুষ সত্যিকার অর্থেই ছেকা খেলে নিজের মাঝে আর ফিরে আসতে পারে না। কিংবা ফিরে এলেও অনেক দেরি হয়ে যায়। তখন কিছু করার থাকে না।
মনটা হইতে হবে ইস্পাতের মতো।
গার্লফ্রেন্ডকে আরেক ছেলের সাথে দেখার জন্য প্রস্তুত থাকুন। যে হাতগুলো নিয়ে আপনি খেলতেন সেই হাতগুলো এখন অন্যের দখলে। এইটা মেনে নিন। মেনে না নিলে আপনি ভেঙ্গে যাবেন। মেনে নিলে দুই দিন অশান্তিতে থাকবেন। তৃতীয় দিন থেকে ঠিকই শান্তিতে থাকবে।
যে ছেলেটার সাথে আপনার গল্প তৈরি হওয়ার কথা ছিল সে এখন বাইকের পেছনে আরেক মেয়েকে বসায়। এটা দেখার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকুন। যে কেয়ারটুকু আপনার পাওনা ছিল সেই কেয়ারটুকু এখন পাচ্ছে অন্য কেউ ব্যাপারটা দেখুন এবং ভুলে যান । লুকিয়ে থাকার কোন মানেই হয় না। কিপ ওয়াচিং। একসময় দেখবেন ব্যাপারটা সয়ে গেছে। আগে মতো আর পেইন লাগবে না।
একটা রিলেশন, সেটা যদি দশ বছরের সম্পর্কও হয় তারপরেও এই জিনিসের জন্য নিজের ক্যারিয়ারের একটা সেকেন্ড নষ্ট করাও উচিত না। যে আপনাকে ছেড়ে গেছে সে কিন্তু আপনাকে ছাড়া ভালোই আছে। সে কিন্তু আনন্দেই আছে। ভালো নেই আপনি। কারন আপনি বোকা। বিসিএসের গুরুত্বপুর্ন পড়াটা ভুলে গেলেও আপনি নিজের প্রেমিকাকে ভুলতে পারেন না। সাধারন জ্ঞানের প্রশ্নের ফাঁকে ফাঁকে তার অসাধারন চেহারাটা ভেসে উঠে।
বাইক দেখলে আপনার মন খারাপ হয়ে যায়, মনে পড়ে বয়ফ্রেন্ডের কথা। আপনার মতো ট্যালেন্টেড ছাত্রীর যে একটা উজ্জ্বল ক্যারিয়ার আছে সেটা আর মাথায় আসে না। নিজের স্বার্থে মানুষকে ছাড় দিতে শিখুন।
অথচ জীবনটা কতো সুন্দর।
আপনি তো সারাজীবন এনগেজড ছিলেন না। এমন একটা সময় ছিল যখন আপনি কারো হাত নিয়ে খেলতেন না। দিন কিন্তু কেটে যেতো ভালো ভাবেই। এমন একটা সময় ছিল যখন আপনি কারো বাইকের পেছনের সঙ্গি ছিলেন না। জীবন কিন্তু তখনও কেটে যেতো। নিজেকে একটা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার যে আনন্দ সেটা গ্রহন করতে শিখুন। দেখবেন বস্তাবন্দী ইমোশন আপনাকে আর কুপোকাত করতে পারছে না।
বসুন, ১ টা ঘন্টার জন্য নিজেকে নিয়ে, দৃঢ়চিত্তে নিজের মনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করুন,অন্যের হাতের পুতুল হয়ে আর কতদিন?
যে আপনাকে আজকে তুচ্ছ মনে করে ফেলে দিয়েছে, সে দুই দিন পরে হলেও সুযোগ বুঝে একই কাজ করতো,ভাগ্য ভালো যে ক্যান্সারটা আগেই কেটে ফেলে দিচ্ছেন, না হলে একটা সময় এটা পুরোটা শরীরেই ছড়িয়ে পড়তো,তখন ফেরার আর কোন পথ থাকতো না !
মনে রাখবেন,পৃথিবীটা অনেক বড়, এখানে প্রেম ভালবাসা,আবেগ, সৌন্দর্য সবকিছুই থরে থরে সাজানো, মানুষ তার যোগ্যতা দিয়ে দাম চুকিয়ে ইচ্ছেমত ব্যাগে ভরে নিয়ে যায়!
আপনি যদি আপনার নিষ্পাপ আবেগ ছেড়ে,উঠে না দাঁড়ান,তাহলে এভাবেই দর্শকের ভূমিকায় থেকে যেতে হবে বাকিটা জীবন!
আর এইসব কথার পরেও যদি উঠে দাঁড়ানোর সাহস না পান,তাহলে একবারের জন্য হলেও নিজের বাবা - মায়ের মলিন মুখগুলোর কথা চিন্তা করেন, যাদের স্বপ্নের পতাকাটা আপনার হাতে তুলে দেওয়া, আপনি হারার সাথে সাথে এই মানুষগুলোরও হার নিশ্চিত হয়ে যাবে 🥲
এখন সিদ্ধান্ত নিন কোনটা আপনি চান?
0 Comments