"কাজের মধ্যে আছেন বলেই শরীর মন পেট সবই সুস্থ থাকে"

মহিলার নাম য়শিদা। হিরোশিমার যেখানে বোমা পড়েছিল তাঁর পাশেই একটা রেস্টুরেন্ট এ চাকুরী করেন। ওয়েটার হিসাবে। দুপুরে ২ টা মাত্র মেন্যু। সুশি সাথে উদোন অথবা সোবা। সুশি আর ঠাণ্ডা সোবা অর্ডার দিলাম। মহিলা অর্ডার নিয়ে কিচেনে জানিয়ে দিলেন। রেস্টুরেন্টে আমি ছাড়া আর একজন মাত্র কাস্টোমার আছে। 

খেয়ে দেয়ে জিজ্ঞাস করলাম, আপনার বয়স জিজ্ঞাস করলে মনে কিছু করবেন? 

কিছু মানুষ আছে যাদের চেহারায় সবসময় হাসি হাসি রেশ লেগে থাকে। মহিলা সেরকম।

আমার দিকে তাকালেন, হাসি মুখের সাথে একটু কৌতূহল যুক্ত হলো। বললেন- ৯০ বছর। হিরোশিমায় যখন বোমা পড়ে তখন তিনি ১১ বছরের কিশোরী। 

একটা ছবি নিতে পারি? 

বললেন, অবশ্যই। একটু ভেতরে গেলেন। আয়নায় মুখ দেখলেন। তারপর চেয়ারে বসে পোজ দিলেন। 

হিরোশিমা থেকে ফেরার সময় ট্যাক্সি করে হোটেল থেকে ষ্টেশনে যাচ্ছি। ট্যাক্সি ওয়ালা বললেন, তাঁর বয়স ৭২। হিরোশিমা শহর পরিষ্কার রাখেন ৭০ বছরের উর্ধের লোকজন। ৯টা থেকে ৩টা পর্যন্ত কাজ করেন। মাসে ১২ দিন। বেতন ৭০ হাজার ইয়েন। রোদে কাজ করতে পারি না। এ জন্য ট্যাক্সি নিয়েছি। আসলে রাস্তাঘাট, পার্ক পরিষ্কারে একধরণের মজা আছে। একসঙ্গে সদলবলে কাজ করা যায়। আর শহরটা পরিষ্কার থাকে। ৩টার মধ্যে কাজ শেষ। তারপর আনন্দ আর আনন্দ। 

তবে বুড়োদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় কাজ হচ্ছে পার্কিং ম্যানেজমেন্ট আর অফিস এর গার্ড। পরিসংখ্যান তাই বলছে। 

জাপানে অবসর নিতে হয় ৬৫ বছর বয়সে। কিন্তু কেউ অবসরে নেই। সবার শরীর মন ৬৫,৭০,৮০, ৮৫ বছর বয়সেও এতটাই সুস্থ থাকে যে, কোন একটা কাজের মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে রাখেন। বা এভাবেও বলা যায়, কাজের মধ্যে আছেন বলেই শরীর মন এতোটা সুস্থ থাকে। 

বাংলাদেশে ও বুড়োরা কাজ করেন। তবে সেটা পেটের দায়ে। শরীর মন সুস্থ রাখার জন্য নয়। বা উল্টোটাও বলতে পারেন, কাজের মধ্যে আছেন বলেই শরীর মন পেট সবই সুস্থ থাকে। তবে এ সুযোগ অনেকাংশে শুধু গরীবের জন্য প্রযোজ্য।

Post a Comment

0 Comments